মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

নরসিংদীর সূর্যমুখী ফুলের বাগান এখন বিনোদন পার্ক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

নরসিংদীতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে ভাগ্য পাল্টে গেছে তৌহিদুল ইসলাম মাছুম ও মিনহাজ মোল্লা ফাহিম নামের দুই ভাইয়ের। প্রধান উদ্যোক্তা মাসুম সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি গ্রামের মরহুম হাছেন আলী মোল্লার নাতি ও মরহুম শাহজাহান মোল্লার ছেলে। সে পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট। শখের বশে গড়ে তোলা এ সূর্যমুখী বাগান এখন দর্শনার্থীদের বিনোদন পার্কে পরিণত হওয়ায় পাল্টে গেছে তার ভাগ্য।
জানা গেছে প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শক আসেন বাগানে। আর সেই বাগান দেখতে আসা দর্শকের প্রবেশ টিকিটমূল্য ২০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৫ শ’ দর্শক প্রবেশ করলেও তার মাসিক আয় হিসাবে কয়েক লাখ টাকা। যা শুধু তেলবীজ বা তেল উৎপাদন করে আয় করা সম্ভব ছিল না। ফলে বিশেষ আয় হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে মাছুম ও ফাহিম।
নরসিংদী সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি শেখ হাসিনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে মেঘনা নদীর পাড়ে ৯ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছিল তৈলবীজ সূর্যমুখী ফুলের বাগান। গত ৭ জানুয়ারি দর্শনার্থীদের টিকিট মূল্যে প্রবেশের উদ্বোধন করা হয়।
সূর্যমুখী ফুল ফোটা শুরু থেকে প্রতিদিন উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভিড়ে সূর্যমুখী গার্ডেন নামের এ বাগানটি এখন মানুষের বিনোদন পার্কে পরিণত হয়েছে।
সূর্যমুখী বাগান মালিক তৌহিদুল ইসলাম মাসুম বলেন, প্রতিদিন ১৫ শ’ থেকে দুই হাজার বিনোদনপ্রিয় মানুষ এবং শুক্রবার ও শনিবার প্রায় ২৫ শ’ থেকে তিন হাজার বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থী বাগান দেখতে আসে। সেই সাথে প্রতিদিন ২০০-৩০০ সূর্যমুখী ফুলসহ গাছ বিক্রি করছি। ছোট চারা ফুলগাছ ৩০ টাকা ও বড় গাছ ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তিনি তিন বিঘা জমিতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করেছেন। এখন তিনি আশা করছেন টিকিট বিক্রি ছাড়া শুধু তেলবীজ থেকে আয় করবেন আরো ডাবল। আর টিকিট বিক্রি তো কয়েক লাখ আছেই।
মেঘনা নদীর পাড়ে আমার মরহুম দাদা হাছেন আলী মোল্লার ৯ বিঘা জমিতে তেলবীজ সূর্যমুখী ফুল চাষ করছি, যা আমার আয়ের নতুন সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাস এ ফুল ফুটবে। ফলে এ মাসে আরো কয়েক লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিতেও ভালো অর্থ আয়ের অন্যতম উদাহরণ এই সূর্যমুখী। সূর্যমুখী ফুলের অনন্য সৌর্ন্দযে মানুষের প্রাণে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সী সাধারণ মানুষ সূর্যমুখী ফুলের সাথে সেলফি বা ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিতে দেখা যায়। বাগানের প্রবেশ পথে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে বাড়তি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন বাগানের দর্শকের হার বাড়ছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে রাখা হয়েছে সূর্যমুখী গার্ডেনকে।
সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা রায়পুরার আসিফ ফয়সাল বলেন, সূর্যমুখী ফুল যেন একটি সূর্য। এত সূর্য একসাথে দেখার জন্য আমার মতো অনেকেই বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলে আসে ঘুরতে।
বাগানটিতে কয়েক লাখ সূর্যমুখী ফুল একসাথে ফুটে আছে দেখে কৌতূহলী মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে। কেউ নৌকায় মেঘনা নদীতে আবার কেউ শহরের যানবাহনে ছুটে আসে শেখ হাসিনা সেতুর প্রান্তরে। সেতুর দুই প্রান্তে গড়ে উঠেছে ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টসহ নানা ধরনের শিশু বিনোদনের ব্যবস্থা।
সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য অসাধারণ। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে সূর্যমুখীতে তা নেই। বরং অন্যান্য আরো কিছু উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। মাসুম বলেন, সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল উৎপাদনের কোনো মেশিন নরসিংদীতে না থাকায় বাণিজ্যিকভাবে অনেকেই তা উৎপাদনে অনাগ্রহ দেখা দেয়। মেশিন থাকলে ৪০% তেল পাওয়া যেত। কিন্তু সরিষার তেল ভাঙ্গানো মেশিনে তেল উৎপাদন করা হয় বলে ২৫% তেল পাওয়া যায়। নরসিংদীতে বাণিজ্যিকভাবে তেলবীজ সূর্যমুখী চাষ করলে লাভবান হতে হলে দরকার তেল সংরক্ষণ মেশিন স্থাপন। তাহলে একজন কৃষক সহজে চাষাবাদে আগ্রহ হবেন। আন্তর্জাতিক পুষ্টিবিদদের অনলাইন তথ্য সূত্রে, সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে অলিক/নিনোলিক এসিড ও ১০০ভাগ উপকারী ফ্যাট। ফলে ফুল যেমন দেখতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে অপর দিকে তেলবীজ দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে।
উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা আসাদ উল্লাহ বলেন, পৌর এলাকার সাটিরপাড়া মৌজায় প্রায় ২১ বিঘা জমিতে ৯ জন কৃষক সূর্যমুখী তেল বীজের চাষ করেছে। কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৯ জন কৃষককে। কিন্তু মাসুমের জমিটি শেখ হাসিনা সেতুর পাশে নদীর পাড়ে হওয়ায় সেটি অপরূপ দেখায়। এ বাগান করতে কৃষি অফিস তিন বিঘা জমিতে কৃষি প্রণোদনা এবং বাকি ছয় বিঘা অতিরিক্ত সে নিজের অর্থায়নে করেছে। আমরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছি। সে এখন একজন সফল সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপাদনকারী। শুধু তেল নয় মাছের খাদ্য হিসেবে খৈল বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। মানুষের হৃদরোগসহ নানান রোগের উপকারী এ তেল বীজ বাগান পর্যটকদের ভিড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। প্রতি বিঘা জমিতে পাঁচ-ছয় মণ তেলবীজ উৎপাদন হয়, যা প্রতি কেজির দাম ৮০-১০০ টাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com