ব্যাটসম্যানরা যখন রুদ্ররূপী হয়ে উঠেন, তখন বোলারদের বেশি কিছু করার থাকে না। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানদের দেখলেই তা বুঝতে পারার কথা। ইনিংসের মাঝপথে সাত বোলার ব্যবহার করেও লিটন দাস-মুশফিকুর রহিমকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। বরং এই দুজনের রেকর্ড তৃতীয় উইকেট জুটিতেই সিরিজ জেতার ভালো রসদ পেয়ে গেছে স্বাগতিকরা। ৪ উইকেটে ৩০৬ রান করেছে বাংলাদেশ। ১৮৬ বলে মুশফিক-লিটনের জুটিটি ছিল ২০২ রানের। তৃতীয় উইকেটে আগের সেরা জুটিটি ছিল ১৭৮। সেখানেও ছিলেন মুশফিক, সঙ্গী ছিলেন তামিম।
তামিম-সাকিব ব্যর্থ হলেও প্রত্যাশা মিটিয়ে ব্যাটিং করেছেন লিটন-মুশফিক। একটা পর্যায়ে লিটন এতই আগ্রাসী হয়েছিলেন যে আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো স্কোর বোর্ড। কিন্তু ফরিদ আহমেদের শর্ট বলে ডিপ স্কয়ার লেগে লিটন ক্যাচ তুলে দিলে সেখানেই শেষ হয় সব সম্ভাবনা। কারণ তার ফেরার পরের বলে ফিরেছেন আরেক সেট ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ৮৬ রানে ক্রিজে থাকা মুশফিকও ক্যাচ তুলে ফিরেছেন। ৯৩ বলে ফেরা এই ব্যাটারের ইনিংসে ছিল ৯টি চার। তার আগে ১২৬ বলে ১৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে ফেরেন লিটন। তাতে ছিল ১৬টি চারের সঙ্গে ২টি চারের মার। এ দুজন ফেরার পর আফিফ-মাহমুদউল্লাহ সেভাবে রান তুলতে পারেননি। আফিফ অপরাজিত ছিলেন ১৩ রানে, মাহমুদউল্লাহ ৬ রানে। অবশ্য লিটনের এই দায়িত্বশীল ইনিংসের অপমৃত্যু আগেই ঘটতে পারতো। তখন ৮৭ রানে ব্যাট করছিলেন। এই সময় কাভারে তার ক্যাচ ড্রপ না হলে পঞ্চম সেঞ্চুরি পাওয়া হয়তো হতো না। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল বলে সেঞ্চুরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা যায়নি তাকে। বরং তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই বড় স্কোরের পেছনে ছুটতে থাকে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ম্যাচে নড়বড়ে শুরুর পর এই ম্যাচে ভালো করতে মুখিয়ে ছিলেন তামিম। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামার পর অনেকটা আত্মবিশ্বাসীও দেখা যাচ্ছিল তাকে। সতর্ক শুরুর পর দ্বিতীয় ওভারে চার মেরেছেন দুটি। অপরপ্রান্তে শুরুতে নড়বড়ে ছিলেন লিটন। ফলে তৃতীয় ওভারে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। পেসার ফজল হক ফারুকি এলবিডাব্লিউর আবেদন করলেও আম্পায়ার সাড়া দেননি তাতে। পরে রিভিউ নিলে দেখা গেছে, বল পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। ফলে একটি রিভিউ নষ্ট হয়েছে সফরকারীদের। এই সময়ে স্কোরবোর্ডও সমৃদ্ধ হয় দ্রুত। কিন্তু তামিম নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। প্রথম ম্যাচের মতো প্রায় একই ভঙ্গিতে আউট হয়েছেন। সপ্তম ওভারে পা বাড়িয়ে ফজল হক ফারুকির ভেতরে ঢুকে পড়া বলে আড়াআড়ি খেলতে চেয়েছিলেন। ফলাফল বল সরাসরি আঘাত করে প্যাডে। আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ারও আঙুল তুলে দিতে দেরি করেননি। তামিম রিভিউ নিলেও ফল হয়নি তাতে।
প্রথম উইকেটের পর থেকেই ধরে খেলতে থাকেন লিটন। দারুণ শুরু দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সাকিবের সঙ্গে। জুটি গড়ে ৪৫ রানও যোগ করে ফেলেন তারা। কিন্তু রশিদ খান নিজের প্রথম ওভারে এসেই আঘাত হানেন তাতে। আফগান তারকার ঘূর্ণিতে পুরোপুরি পরাস্ত হন সাকিব। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বামহাতি অলরাউন্ডারকে ফিরতে হয়েছে ২০ রানে। তার ৩৬ বলের ইনিংসে ছিল ২টি চার। তার পরেই সময় যত গড়িয়েছে ব্যাট হাতে স্ট্রোকের ফুল ফুটিয়েছেন লিটন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মুশফিক। ফরিদ আহমেদ ৫৬ রানে নিয়েছেন দুটি উইকেট। একটি করে শিকার ফজল হক ফারুকি ও রশিদ খানের।