২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদর দপ্তর, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের ১৩তম শাহাদত বার্ষিকী গতকাল শুক্রবার যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।
এ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বনানীস্থ সামরিক কবরস্থানে শহিদদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শাহাদাত বরণকারী সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির পক্ষে সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.আখতার হোসেন, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম এবং শহিদ পরিবারের সদস্যগণ। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং ওই সময় কর্মরত সামরিক সদস্যরা স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ ছাড়াও গতকাল শুক্রবার সকল সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সকল স্তরের সেনা সদস্যগণের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিপথগামী বিডিআর সৈনিকরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা করেন তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নবজ্যোতি খিসা। এ ছাড়া বিজিবি’র নিজস্ব আইনে ৫৭টি মামলায় সারাদেশে ৫ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। ২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর লালবাগে অবস্থিত আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে এ হত্যা মামলার রায় দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে ৮৫০ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ২৭১ জনকে খালাস দেয়া হয়। ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ২৬৬ জনকে। ২০১৭ সালের ২৭শে নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখা হয়। আট জনের মৃত্যুদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চার জনকে খালাস দেয়া হয়। নি¤œ আদালতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডভূক্ত ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলাকালে কারাগারে দ’ুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ আসামি।
এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এখনো বিচারাধীন। মামলার আসামি ৮৩৪ জন। এর মধ্যে ২৪ জন এরই মধ্যে মারা গেছেন। পলাতক রয়েছেন ২০ জন।