সম্মান শব্দটা দেখতে আক্ষরিকভাবে ছোট মনে হলেও এর গুরুত্ব ব্যাপক। সবাই চায় মানুষ তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করুক। কিন্তু একটি কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, অন্যের থেকে সম্মান পেতে হলে অন্যকে সম্মান করা খুব জরুরি। আপনি নিজে যদি কাউকে সম্মান না করেন, তাহলে কারো কাছে সম্মান আশা করাটা আমি বলব আমাবস্যার রাতে চাঁদ কল্পনা করার মতো। আমাবস্যায় যেমন আপনি শত চাইলেও চাঁদ দেখতে পাবেন না তেমনি অন্যকে অসম্মান করলে নিজে কোনোদিন সম্মান পাবেন না। আপনি দেশের যত বড় পদেই অবস্থান করুন না কেন আপনার মাপকাঠি কিন্তু আপনি এবং আপনার চরিত্র।
উঁচু পদ বা কিছু অস্থায়ী প্রাপ্তিতে যদি আপনি নিজেকে বড় কেউ মনে করে বসেন, তাহলে এটি মারাত্মক ভুল। নিজের বড়ত্ব জাহির করতে গিয়ে, যদিও মানুষ অন্যকে কিছুটা হলেও সম্মান করে। কিন্তু একজন মানুষের মুখের কথা এবং ভাব ভঙ্গিমা বুঝিয়ে দেবে যে, তিনি কি আসলেই অন্যকে সম্মান করছেন কি না। মানুষ হয়তো সামনে থেকে নিছক একটা সম্মান দেয়ার ভান ধরবে তবে অন্তর থেকে যে সম্মান আসে সেটা কোনো দিনই পাবেন না। ব্যাপারটা ঠিক আয়নায় নিজের প্রতিকৃতি দেখার মতো। আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যেমন অঙ্গভঙ্গি করবেন অবিকল সেটাই প্রতিফলিত হবে। একইভাবে অন্যকে দেয়া সম্মান ও প্রতিফলন হয়ে আপনার দিকে ফিরে আসবে। ইসলামেও সম্মান বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। যেখানে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং এই মানবজাতিকে সম্মানিত করেছেন তখন আমরা কেন নিজেরা নিজেদের সম্মান দিতে দ্বিধাবোধ করি।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছি স্থলে ও জলে, তাদেরকে দিয়েছি উত্তম জীবিকা এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত- ৭০) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘আল্লাহ যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন তাকে তোমরা আইনানুগ কারণ ছাড়া হত্যা কোরো না।’ (সূরা আনআম, আয়াত-১৫১)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। (সূরা হুজুরাত-৪৯ : ১০) আল্লাহ তায়ালা আরেক আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিন নর ও মুমিন নারী সবাই একে অন্যের বন্ধু’। (সূরা তাওবা-৯ : ৭১) আচ্ছা একটি কথা বলুন তো, একজন ভাই কিভাবে তার আরেক ভাইকে অসম্মান করতে পারে? যেখানে সৃষ্টিকর্তা নিজে আমাদের মধ্যে একটি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন সেখানে আমরা যদি একে অপরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা না করি তবে কি আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ পায় না? আর এই অবাধ্যতাই আমাদের অন্তরের অহঙ্কারের পরিচায়ক।
আমরা হাদিসেও দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ সা:-ও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষকে সম্মান দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ সা:-এর পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁকে বলা হলো, লাশটি একজন ইহুদির। রাসূল সা: বললেন, সে কি মানুষ নয়?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস-৯৬১) আমরা কোথাও যেন বিভেদের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়েছি। নিজেদের সম্মানিত জাহির করতে গিয়ে অন্যকে সম্মান দেয়ার কথা ভুলে গেছি। যে আমার সামনে আছে সে সব কিছুর ঊর্ধ্বে একজন মানুষ তা আমরা বেমালুম ভুলে বসে আছি। এই হাদিস যেন সেই বেড়াজাল কেটে এক সুন্দর পথের দিশা দেয়। এ ছাড়াও হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: মানুষকে ভয় দেখাতে এবং শাসাতে নিষেধ করেছেন। কেননা, তা মানুষের অধিকার ও মর্যাদার পরিপন্থী। তিনি বলেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমকে ভয় দেখানো বৈধ নয়’। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-৫০০৪) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী, সেই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।’ (আত তারগিব, হাদিস-২৬২৩)
পরিশেষে, আমাদের সঠিক পথের দিশা দানকারী রব আপনাকে আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমরা যার উম্মতের অংশ হতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করি সেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: আমাদের অপরকে সম্মান দেয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। আর আমরা যদি অন্য মুমিনদের সম্মান না দেই তাহলে সেটা আমাদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায়। আর আপনি যদি অপরে সম্মান না দেন তাহলে নিজে সম্মান পাবেন সে আশা করা বড্ড বোকামি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন। লেখক: শিক্ষার্থী ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।