উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পাশাপাশি আমদানি পর্যায়েও ১০ শতাংশ ভ্যাট কমছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ কমে ভ্যাট ৫ শতাংশ হচ্ছে। উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এবং ভোক্তা পর্যায়েও ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। দাম কমবে কি না ব্রাজিল বলতে পারবে, কারণ ৯০ শতাংশ তেল আমরা সেখান থেকে আমদানি করি।
টিপু মুনশি বলেন, যার পাঁচ লিটার তেল দরকার সে ১০ লিটার কিনলে ঠেকাতে পারবো না। রমজান উপলক্ষে সবাই কিনতে শুরু করলে তো বাজারে ঘাটতি দেখা দেবেই। যতটুকু কেনা দরকার ততটুকুই কিনি। সবার রান্নাঘরে তো আমরা ঢুকতে পারবো না। রমজান মাসের জন্য বেশি না কেনার অনুরোধ করছি। পণ্য সংকট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ দ্রব্য মজুদ আছে। সেটা দিয়ে রমজান মাস পার হয়ে যাবে। এখন দামটা কেমন হবে সেটি কথা হতে পারে। কেউ কেউ মজুত করে রাখছে, সেটি বড় সমস্যা। টিসিবিও এক কোটি পরিবারকে পণ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। পণ্যের দাম কমতেও তো পারে। আমরা চেষ্টা করছি রমজান পর্যন্ত আগের দামটা রাখার জন্য। কিন্তু ব্যবসায়ী ব্যবসা করবেই। বাইরের দেশের কোম্পানিগুলো রমজান বা ঈদে ডিসকাউন্টসহ বিভিন্ন অফার দেয়, আমাদের দেশে সেটি নেই। সামনের দিনগুলোতে পণ্যের দাম কেমন হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পণ্যের দাম কমতেও তো পারে। আমরা চেষ্টা করছি, রমজান পর্যন্ত আগের দামটা রাখার জন্য। আমরা এক হাজার ৩৫০ ডলার দাম ধরে ১৬৮ টাকা প্রতি লিটার তেলার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। বর্তমাসে সে তেল এক হাজার ৯০০ ডলার হয়ে গেছে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। এসআরও হলে পরে আমরা সঠিক দামটা বলতে পারবো। আজ অথবা কালকের মধ্যে আশা করছি চিঠিটা আমরা পেয়ে যাবো। টিসিবির পণ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিসিবির পণ্য দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ এটাকে আবার পেশা হিসেবে নিয়েছেন। সেজন্য কীভাবে সুশৃঙ্খলভাবে টিসিবির পণ্য দেওয়া যায় এবং তাদের তালিকা করে দেওয়া যায় কি না সেটা ভাবছি। এছাড়াও ভোটের সময় ব্যবহার করা অমোচনীয় কালি ব্যবহার করেও যদি তাদের চিহ্নিত করা যায় সেটিও দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এবারের বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থায় ন্যায্যতা’। প্রান্তিক পর্যায়ের ভোক্তারা যাতে সহজে অভিযোগ করতে পারে সেজন্য চালু করা হয়েছে ‘ভোক্তা বাতায়ন’ শীর্ষক হটলাইন সার্ভিস, যার নাম্বার ১৬১২১। এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের ভোক্তারাও অভিযোগ দায়েরের সুযোগ পাবে।
ই-কমার্সে ভোক্তার-অধিকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন ১০টি মোটরসাইকেল কেনার যৌক্তিকতা নেই। সে ব্যক্তি ১০টি কিনে ব্যবসা করতে চায়। তখন সে তো ভোক্তা থাকে না, ব্যবসায়ী হয়ে যায়। ফলে সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। ইভ্যালির বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না, বিচারবিভাগে সেটি চলে গেছে। তবে অন্যান্য যেগুলো ক্লিয়ারেন্স পেয়েছি সেগুলো পেমেন্ট করে দিচ্ছি। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ভোক্তা অধিকারের সেবা খাতেও প্রচুর কাজ করার আছে। এই খাতে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে। আমরা পণ্যের বাইরে সেবা খাত নিয়েও কাজ করবো। এসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।