কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় খননকৃত খালের দুইপাড়ে বৃক্ষরোপ প্রকল্পে ছয়নয়ের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিটি গাছের চারার চড়া মূল্য, পিয়নের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে চারা রোপনের কাজ এবং নির্ধারিত পরিমান চারা রোপন না করলেও ঠিকাদারকে বিল প্রদানের অভিযোগ উঠেছে নাগেশ্বরীর দপ্তরটির বিরুদ্ধে। নাগেশ্বরীর বোয়ালের ডারা থেকে বেরুবাড়ী স্লুইসগেট পর্যন্ত বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্পের খননকৃত খালের দুই পাড়ে ২০২১-২২অর্থবছরে ইআইআর প্রকল্পের আওতায় ৫কিলোমিটার এলাকায় ১৮লাখ টাকা ব্যায়ে ২২হাজার ৫০০ বনজ ও ফলজ বৃক্ষ রোপন করা হয়। এসব বৃক্ষের মধ্যে ২০হাজার বনজ ও ২হাজার ৫০০টি ফলজ। বনজ বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে মেহগনি, আকাশমনি, শিমুল, কৃষ্ণচুড়া, জারুল, হরিতকি, বহেড়া, অর্জুন, আমলকি, দেশিনিম। অপরদিকে ফলজের মধ্যে রয়েছে আম (কলম), জাম, গোলাপজাম,জামরুল,পেয়ারাও বাতাবি লেবু। তিন ফুট উচ্চতার প্রতিটি বনজ চারার দাম ধরা হয়েছে ৬০ টাকা এবং পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি ফলজ বৃক্ষের চারার দাম ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা। এ মোতাবেক মেহগনি গাছের চারার দাম পড়েছে ৬০ টাকা যা স্থানীয় বাজারে দাম মাত্র ৫টাকা। অপরদিকে একটি দেশি প্রজাতির কালো জাম গাছের চারার দাম ধরা হয়েছে ২৫০টাকা যার স্থানীয় বাজারে দাম মাত্র ১০টাকা। এসব বৃক্ষরোপনের কাজ দুটি পায় দুজন ঠিকাদার। একজন রাজশাহীর ঠিকাদার তসলিম অপরটি খোদ নাগেশ্বরী বরেন্দ্র অফিসের পিয়ন এরশাদুল হক। প্রকল্পের শুরুর স্থান বোয়ালেরডারা ০০ মিটার থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত (১.৫কিমি) ১০হাজার বনজ বৃক্ষ রোপনের কাজ পায় নাগেশ্বরী বরেন্দ্র অফিসের মাষ্টার রোলে কর্মরত পিয়ন এরশাদুল হকের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইশা ইন্টারপ্রাইজ। ১৫০০ মিটার থেকে ৪০০০মিটার পর্যন্ত (২.৫ কিমি) ২হাজার ৫০০টি ফলজ বৃক্ষ ও ৪০০০মিটার থেকে ৬০০০মিটার পর্যন্ত (২কিমি) ১০হাজার বনজ বৃক্ষ রোপনের কাজ পান রাজশাহীর ঠিকাদার তসলিম। দরপত্রের শর্ত মোতাবেক ২০২১ সালের ১৫ আগষ্টের মধ্যে বৃক্ষরোপন শেষ করতে হবে এবং ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত রোপনকৃত চারার রক্ষানাবেক্ষন করতে হবে এবং চারার পরিমান,দর ও জাত উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টানাতে হবে ঠিকাদার বা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এশা ইন্টার প্রাইজ তার কাজের এলাকা ১.৫কিমি এলাকা জুড়ে ১হাজারের মতো চারা রোপন করেছে। এর মধ্যে বেশীরভাগ গাছের চারা মরে শুকিয়ে গেছে। অপরদিকে ঠিকাদার তসলিমের প্রথম ২.৫কিমি এলাকায় ২হাজার ৫০০টি ফলজ বৃক্ষ এবং পরবর্তি ২কিমি এলাকায় ১০হাজার বনজ বৃক্ষের চারা রোপনের কথা থাকলেও গড়ে কিছু মেহগনি ও আকাশমনি জাতের বনজ বৃক্ষের চারা রোপন করেছেন। সব মিলিয়ে ২হাজারের বেশী হবে না। এগুলোর বেশীরভাগ গাছ মরে গেছে। অপরদিকে ফলজ বলতে দু,একটি জাম ছাড়া অন্য কোন ফলজ বৃক্ষের অস্তিত্ব মেলেনি প্রকল্প এলাকা জুড়ে। বেরুবাড়ী সরকারপাড়া গ্রামের মোকাদ্দেস, আহসান আলী, দারাজ উদ্দিন বলেন, এখানে গত বছর বন্যার আগে কয়েকজনকে কিছু গাছের চারা লাগাতে দেখেছি। তারপর আর কাউকে দেখিনি। সারা এলাকা জুড়ে মেহগুনি আর দুই একটা আকাশমনি ছাড়া ছাড়া অন্য গাছের চারা নেই। তার বেশীরভাগ চারা মরে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও হবে না। মিরার ভিটা এলাকার আলামিন, আকবর আলী জানান, এখানে ১শ থেকে দেড়শ জাম গাছ ছাড়া অন্য কোন ফলের গাছ লাগানো হয় নাই। যেগুলো লাগিয়েছিলো সেগুলোও গরু ছাগলে খেয়ে নষ্ট করেছে। নাগেশ্বরী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপসহকারী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার বলেন, রোপনকৃত গাছের কিছু অংশ বিভিন্ন উপায়ে নষ্ট হয়েছে। ঠিকাদার এসব গাছ চলতি বছর জুনের মধ্যে পুনরায় রোপন না করলে বিল দেয়া হবে না। রোপনকৃত গাছের পরিমান নিরক্ষণ শেষে বিল নির্ধাণ করে প্রথম ধাপের বিল পরিশোধের কথা অস্বীকার করেন তিনি। তবে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২৭ জানুয়ারী রোপনকৃত গাছের জরিপ করে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। জরিপে ইশা এন্টারপ্রাইজ’র রোপনকৃত ১০হাজার গাছের মধ্যে ৭০৯০টি জীবিত দেখানো হয়। ৭০৯০টি গাছের বিপরীতে মোট ৪২৫৪০০ টাকা বিল ধরা হয়। শতকরা ৫ভাগ কমে প্রথম ধাপে (মোট বিলের অর্ধেক) চলতি বিল ২লাখ ২০হাজার ৬৫টাকা পরিশোধ করে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। অপর দিকে ঠিকাদার তসলিমের ১০হাজার বনজের মধ্যে জীবিত ৭১৩১টির বিপরিতে মোট বিল ৪২৭৮৬০টাকা ও ফলজ ২হাজার ৫০০মধ্যে জীবিত ১৭৮৩টির বিপরিতে মোট বিল ৪৪৫৭৫০টাকা ধরা হয়। তার মধ্যে চলতি বিল (মোটবিলের অর্ধেক) যথাক্রমে ২১৩৯৩০টাকা ও ২২২৮৭৫টাকা পরিশোধ করে কর্র্তৃপক্ষ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইশা এন্টার প্রাইজের মালিক কাম নাগেশ্বরী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিসের পিয়ন এরশাদুল হক প্রথম বিল পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, তিনি নিজে গাছ রোপন করেনি। উভয় ঠিকাদার কুড়িগ্রামের একজন নার্সারী মালিককে গাছ রোপনের দায়িত্ব দিয়েছেন। কি পরিমান গাছ রোপন করা হয়েছে তিনি সেটা জানেন না। নাগেশ্বরী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আলমগীর কবির এ বিষয়ে কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাগেশ্বরী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপসহকারী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার উক্ত দুনীর্তির সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক সুত্র।