কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রহণ করেছেন উচ্চশিক্ষা। এরপর বিসিএস ক্যাডার এবং ১০ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন। তবে সব কিছু ছেড়ে এখন তিনি পুরোদস্তুর একজন গৃহিণী। সন্তানদের বাড়তি সময় দিতেই এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত ই হুর (সেতু)। গত বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) কর্মজীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছেন জান্নাত ই হুর (সেতু)। এদিকে এত বড় ত্যাগ স্বীকারের দিনটিতে তার বাসা বেলুন দিয়ে সাজিয়ে, ফুলের তোড়া দিয়ে এবং কেক কেটে জান্নাতকে বরণ করে নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে, ব্যক্তি জীবনে তিন কন্যা সন্তানের জননী জান্নাত। স্বামী সানোয়ার রাসেল সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত। জান্নাত শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টে এমএস সম্পন্ন করেন জান্নাত। একই বছর ২৯তম বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সেবছরই সহপাঠী সানোয়ার রাসেলের সঙ্গে আবদ্ধ হন বিয়ের বন্ধনে। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরে তার কর্মজীবন শুরু হয় জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে। ২০১৫ সালে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। পেশাগত জীবনে সাফল্যের চূড়ায় থেকেও স্বেচ্ছায় অবসরের ব্যাপারে জান্নাত ই হুর সেতু বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরি করি। পেশাগত কারণে খুব ব্যস্ত সময় পার করতে হয় আমাদের। ফলে সন্তানরা বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে জীবনে। এসব নানা দিক চিন্তা করেই আমি চাকরিটা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য গত জানুয়ারিতে আমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। আর সে মোতাবেক ৩১ মার্চ ছিল কর্মস্থলে আমার শেষ দিন। এদিন সহকর্মীদের কাছ থেকেও আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছি। এ ব্যাপারে জান্নাতের স্বামী সানোয়ার রাসেল বলেন, স্বামী হিসেবে আমি আমার স্ত্রীর চিন্তা ও দর্শনকে সম্মান জানাই। আমি মনে করি সংসারের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব স্বামী হিসেবে আমার। কাজেই আমার স্ত্রী ঘরে ও বাইরে দ্বিগুণ পরিশ্রম না করে যদি শুধু ঘরের দায়িত্ব নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন, তবে আমারও উচিত হবে তার এই সিদ্ধান্তে পাশে থেকে সর্বদা তাকে সহযোগিতা করে যাওয়া।