মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

চিনি নিয়ে কারসাজি! মোবারকগঞ্জ চিনিকলের চিনিও পাওয়া যাচ্ছে না খোলাবাজারে

হুমায়ুন কবির ঝিনাইদহ :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২

কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান হলো মোবারকগঞ্জ চিনিকল।এই চিনিকলে যে সব চাষীরা আখ সরবরাহ করেন তাদের প্রাপ্য চিনিও এবার কমিয়ে দেওয়া হলো। ফলে আখচাষীগণ ও চিনিকলের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ। গত ২১ মার্চ ২০২২ তারিখ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বিপণন বিভাগের প্রাধান মাযহার উল হক খান স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে চিনিকলসমূহে ২০২১- ২০২২ আখমাড়াই মৌসুমে আখচাষী খাতে প্রাপ্য চিনি বিক্রির নতুন এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।চিনি বিক্রিবিলি/বন্টন নীতিমালা মোতাবেক ১৮/১০/৯৯ ইং তারিখের আদেশে বলা হয়েছে, চিনি উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষে ইক্ষু চাষীখাতে চিনি বরাদ্ধের প্রথা প্রবর্তন করা হয়। ইক্ষু চাষীগণ চিনিকলসমুহে সরবরাহকৃত প্রতি ৩০ মণ আখের বিপরীতে ১২ কেজি হারে চিনিকলের ইসুকৃত কুপন প্রাপ্তি সাপেক্ষে কর্পোরেশনের নির্ধারিত দরে প্রাপ্য হবেন। এই বরাদ্দের পরিবর্তে এবার টনপ্রতি ৮ কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে একজন আখচাষী টন প্রতি পূর্বের থেকে ২ কেজি চিনি কম পাবেন। চাষীদের আখ চিনিকলে নেওয়ার সময় চিনির কুপন দেওয়া হয়েছে ও চিনি সংগ্রহের জন্য ৬০ দিন সময়ও বেধে দেওয়া হয়েছে। অনেক চাষী তাদের চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন না নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে। এই মৌসুমে মোবারকগঞ্জ চিনিকলে চাষিখাতে কৃষকদের চিনি পাওনা রয়েছে ৬৩৬ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের এরুপ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ করে দেখা যায়, স্থানীয় বাজারে খোলা চিনি ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ আমাদের চিনিকলে উৎপাদিত দেশি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ৭৫ টাকায়। চিনিকলে “প্যাকেট চিনি “ তৈরির খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কম মূল্যে তা বিক্রি না করা প্রসঙ্গে একটি আবেদনপত্র পাঠায় ২৩ মার্চ ২০২২ তারিখ মোবারকগঞ্জ চিনিকলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন।উক্ত আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, সদর দপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত খোলা চিনির মূল্য প্রতি কেজি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।অটো প্যাকেজিং মেশিনের মাধ্যমে ১ কেজি চিনি প্যাকেট করলে তার মূল্য দাঁড়ায় ৭৯.৮৭ টাকা। কিন্তু মোবারকগঞ্জ চিনিকল থেকে প্রতি কেজি প্যাকেট চিনি বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ৭৫ টাকা মূল্যে।এখানে প্রতি কেজি চিনিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৪.৮৭ টাকা।একারণেই মোবারকগঞ্জ চিনিকলের প্যাকেট চিনির মূল্য বৃদ্ধি ব্যতীত বিক্রি না করার বিশেষ অনুরোধ জানানো হয় মোচিক শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের এই আবেদন প্রসঙ্গে ২৯ মার্চ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বিপণন বিভাগের প্রধান মোঃ মাযহারুল উল হক খান স্বাক্ষরিত আর একটি পত্র মারফত জানান, মাহে রমজানকে সামনে রেখে স্পর্শকাতর সময়ে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের উত্থাপিত প্রস্তাব চিনি শিল্পের সুরক্ষার পরিপন্থী।এ কারণে সদর দপ্তরে প্যাকেটজাত চিনির চাহিদার বিপরীতে নির্বিঘœ সরবরাহ অব্যাহত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।একদিকে চিনিকলের মূল নিয়ামক হলো আখ। সোনার বাংলা গড়ার রুপকার এই কৃষক ভাইয়েরা তাদের জমিতে আখ রোপণ করে যখন নিজেদের প্রাপ্য চিনি প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তখন তাদের মনে এই প্রশ্নের উদ্রেগ হচ্ছে যে, কেনো আমরা আখ রোপণ করবো?আমাদের আখ রোপণে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পরির্তে ন্যায্য পাওনাও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।অপরদিকে দেশের চিনিকলগুলতে উৎপাদিত দেশীয় প্যাকেট চিনি ৪.৮৭ টাকা লসে বিক্রি করা হচ্ছে।বাজারে এই প্যাকেট চিনিরও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তবুও কেনো লসে চিনি বিক্রি করা হবে? সুগারমিলসমূহের প্যাকেট চিনি ঢাকায় নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রির কথা বলে তা খাদ্য সরবরাহকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠানের আউটলেটে বিক্রি করা হচ্ছে। পূর্বে যখন খোলা চিনির মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারিত ছিল তখন প্যাকেট চিনির মূল্য ছিল ৬৫ টাকা। পরবর্তীতে সরকার চিনির মূল্য ৭৪ টাকা নির্ধারণ করলে প্যাকেট চিনির মূল্য নির্ধারণ করে মাত্র ৭৫ টাকা। ফলে প্রতি কেজি চিনি ৪.৮৭ টাকা লসে বিক্রি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় সুগার কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত দেশীয় চিনির চাহিদার ভিত্তিতে মূল্যবৃদ্ধি না করে বরং লস করে চিনি বিক্রি করে চিনি শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সুগার কর্পোরেশনের মধ্যে থাকা একটি চক্র। কালীগঞ্জে অবস্থিত মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের চিনিও পাওয়া যাচ্ছে না স্থানীয় খোলাবাজারে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য করপোরেশনের কর্তা ব্যক্তিগণ কি এ ব্যাপারটা খতিয়ে দেখবেন? নাকি আখচাষীকে তার ন্যায্য পাওনা কমিয়ে অসন্তুষ্ট করে এবং লসে চিনি বিক্রি করার মতো সিদ্ধানগ্রহণকারীরা বাংলাদেশ চিনি শিল্পকে ধ্বংস করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এ প্রশ্ন এখন জনমনে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com