মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের ৬৫৯টি থানার ন্যায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করাসহ গৃহহীন পরিবারের জন্য পুলিশের নির্মিত বাড়ি রবিবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ পুলিশের সব থানা ও পুলিশ লাইন্সের ন্যায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানা অনলাইনে সংযুক্ত থেকে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। এ সময় গোপালপুর থানা প্রান্ত থেকে যুক্ত ছিলেন গোপালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা, ওসি মোশারফ হোসেন, প্রেসক্লাব সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও সংবাদকর্মী সেলিম হোসেন প্রমূখ। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত বাড়ী পেয়েছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার শাহাপুর গ্রামের মৃত রহিমের স্ত্রী ভিখারি বিলাসী বেগম(৮৪)।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশারফ হোসেন জানান, বিলাসী বেগমের স্বামী ছিলেন একজন ভূমিহীন দিনমজুর। অভাব অনটনের সংসারে দু’সন্তান জন্ম নেয়ার কিছুদিন পর স্বামী রহিম মারা যান। তার কয়েক বছর পর একমাত্র ছেলের মৃত্যু হয়। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বিলাসী বেগম ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে বাড়ী বাড়ী ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহী শুরু করেন। দিনে ভিক্ষা করে রাতে মেয়েকে নিয়ে থাকেন শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়। এক সময় মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় স্বামী তাকে তালাক দেয়। তারপর থেকে মেয়েকে নিয়েই সেই স্কুলের বারান্দায় রাত্রিযাপন করেন ভিখারি বিলাসী বেগম। এভাবে কেটে যায় দীর্ঘ তের বছর। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবেনা। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার প্রতিফলনই ‘সকলের জন্য আবাসন’ প্রকল্পে সামিল হয়ে দেশের প্রতিটি থানায় একটি করে গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘরনির্মাণ কর্মসূচি নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। এর অংশ হিসাবে গোপালপুর থানা পুলিশের সহযোহিতায় শাহাপুর গ্রামে দুই শতাংশ জমিক্রয় করে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয় বিলাসী বেগমকে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজস্ব মালিকানায় বাড়ীসহ পাকা ঘর পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বিলাসী বেগম জানান, সারা জীবন কষ্টের পর স্বর্গের ঠিকানা পেয়েছেন তিনি। আনন্দাশ্রুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ পুলিশকে আশির্বাদ করেন তিনি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা যায়, ধর্ষণ, নির্যাতন কিংবা অপরাধের শিকার নারী তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা থানার পুরুষ পুলিশ সদস্যের কাছে বর্ণনা করতে চান না। তাদের বেশির ভাগই লজ্জা ও সংকোচ বোধ করেন। তাই নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। সেলক্ষ্যেই স্থাপিত এই ডেস্কের কর্মকর্তারা নারী ও শিশুদের নানামুখী সেবা দিয়ে আসছেন।
ইতোমধ্যে ৬৫৯টি থানায় স্থাপিত নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইনের আলোকে সমস্যা সমাধানের জন্য ডেস্ক পরিচালনাকারী পুলিশ সদস্যদের সম্যক ধারণা দেয়া হয়েছে। সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে যথাযথ আচরণ, করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। সার্ভিস ডেস্ক কর্মকর্তা থানায় আগত নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যা মনোযোগ সহকারে শুনবেন, নির্ধারিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করবেন এবং যথাযথ আইনাগত ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে পুলিশ কর্তৃক দেশের প্রতিটি থানায় একটি করে গৃহহীন পরিবারকে ন্যূনতম এক কাঠা জমিসহ একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, প্রতিবন্ধী ও উপার্জনে অক্ষম, অতিবৃদ্ধ ও পরিবারে উপার্জনক্ষম সদস্য নেই এমন পরিবার অথবা অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের এই বাড়ি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে রবিবার বাড়িরও উদ্বোধন করেন। খুবই টেকসই করে নির্মিত প্রতিটি বাড়ির আয়তন ৪১৫ বর্গফুট। এসব বাড়ি নির্মাণে পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে মোট ৩টি কক্ষ রয়েছে। রয়েছে আরো সুযোগ-সুবিধা। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, এসপি অফিস, এসবি, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে যাচাই-বাছাই করে বাড়িগুলো অত্যন্ত গরিবদের মাঝে বণ্টন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।