রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জামালপুর জেলার তিন হাজার প্রান্তিক পরিবারকে উন্নত আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে উপভোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে ইসলামপুরে সিডস কর্মসূচির অবহিতকরণ সভা কে হচ্ছেন নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কেশবপুরে সংবাদ সম্মেলন চিলাহাটি প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক মেয়াদের কমিটি গঠন বদলগাছীতে কৃষকের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ উলিপুরে ইউড্রেনের দুই পাশের সংযোগ সড়ক হওয়ায় এলাকাবাসী আনন্দিত কালীগঞ্জে সরকারি স্থান থেকে ফুলের হাট স্থানান্তর: বিপাকে প্রতিবন্ধী ইজারাদার পিআইবি,র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলো নগরকান্দা ও সালথার সাংবাদিক বৃন্দ গজারিয়া স্বপ্নপূরণে ছেলেকে হেলিকপ্টারে বিয়ে করালেন স্কুলশিক্ষক বাবা বরিশালে প্রচন্ড তাপদাহে বাড়ছে তালপাখার চাহিদা

ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট 

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংকও মুদ্রাবাজার ধার করছে

দেশের মুদ্রাবাজারে তারল্য সংকট বেড়েই চলছে। বেসরকারি খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ছাপিয়ে এ সংকট প্রায় সব ব্যাংকেই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংককেও এখন মুদ্রাবাজার থেকে ধার করতে হচ্ছে। যদিও সংকটের সময় দেশের মুদ্রাবাজারে ত্রাতার ভূমিকায় থাকত এ ব্যাংকগুলো। কলমানিসহ মুদ্রাবাজারের উত্তাপ কমাতে তৎপর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার দেয়া হচ্ছে। রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) হিসাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় এ পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে।
কলমানি বাজারের সুদহার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার পরও গতকাল কলমানি বাজারের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে কলমানিতে অর্থ লেনদেন হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল কলমানি বাজারে একদিন মেয়াদি লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। তবে সুদহার বেঁধে দেয়ায় ধারদাতা ব্যাংকগুলো এখন আর কলমানিতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কলমানির পরিবর্তে ব্যাংকগুলো এখন শর্ট নোটিসে দুই থেকে ১৪ দিন মেয়াদি ধার দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সুদহার ৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। মেয়াদ আরো বেশি হলে সেক্ষেত্রে ৯ শতাংশের বেশি সুদও গুনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। যদিও দেশের ব্যাংক খাতে এখন ঋণের সুদহারই সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারিত রয়েছে। মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বৃহস্পতিবার স্পেশাল রেপো ও এএলএস হিসেবে মোট ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মোট ১৩টি ব্যাংককে এ ধার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রেপোর সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এএলএস ধার দেয়া হয়েছে। বুধবারও দেশের ব্যাংকগুলোকে ৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকা ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণপত্রের (এলসি) দায় পরিশোধ করতে প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাজার থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে ডলার কিনতে হচ্ছে। এতে নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। মুদ্রাবাজারে ধারদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে এ ব্যাংকগুলো এখন ধারগ্রহীতায় পরিণত হয়েছে। ডলার কিনতে গিয়ে অনেক বেসরকারি ব্যাংককেও একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। তবে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকই আমানতের সুদহার কমিয়ে আনার খেসারত দিচ্ছে। নামমাত্র সুদে কলমানি বাজার থেকে টাকা ধার করার নীতিতে চলছিল এসব ব্যাংক। ঈদুল ফিতরসহ নানা কারণে অর্থের চাহিদা বাড়ায় এখন ব্যাংকগুলোকে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ মানি মার্কেট ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বামডা) তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের মুদ্রাবাজারে টাকা ধার দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে আছে ব্যাংক এশিয়া। এছাড়া আইএফআইসি, উত্তরা ও পূবালী ব্যাংকও ধারদাতা ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও ধার করতে হচ্ছে। দেশের বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ ব্যাংকই বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলো থেকে ধার নিয়ে দৈনন্দিন লেনদেন সম্পন্ন করছে। এবি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ঢাকা, এনআরবিসি, মেঘনা, সাউথ বাংলা, মিডল্যান্ডসহ নতুন-পুরনো আরো কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।
এডি রেশিও ৭২ শতাংশ হলেও এ মুহূর্তে নগদ অর্থের সংকটে আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। দেশের বেসরকারি খাতের নেতৃস্থানীয় এ ব্যাংক প্রায় প্রতিদিনই মুদ্রাবাজার থেকে টাকা ধার করে চলছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, দেশের অর্ধেক এটিএম বুথের মালিকানা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। বিপুল সংখ্যার এ এটিএম বুথগুলোয় প্রতিদিন ২ হাজার কোটি টাকা রাখতে হচ্ছে। ঈদের আগে এ চাহিদা আরো বাড়বে। আমাদের হাতে থাকা নগদ অর্থ এটিএম বুথে চলে যাওয়ায় ধার করতে হচ্ছে। আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিস্থিতি ছিল না। এ কারণে আমরা সরকারি বিল-বন্ডে বেশি বিনিয়োগ করেছিলাম। আগামী জুনের মধ্যে আমাদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিল-বন্ডের মেয়াদ পূর্ণ হবে। ওই অর্থ নগদায়ন করা হলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সংকট কেটে যাবে।
মুদ্রাবাজার থেকে ধার করতে হচ্ছে বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংককেও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, করোনাসৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগের সময় তহবিল ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে আমরা উচ্চসুদের কিছু আমানত ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্বল্প সুদে কলমানি বাজার থেকে অর্থ পাওয়া যাওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে মুদ্রাবাজারে অর্থের টান পড়েছে। প্রয়োজন মেটাতে আমরা সোয়াপ, রেপো, শর্ট নোটিসসহ নানা মাধ্যমে ধার করছি। কিন্তু সমস্যা হলো শর্ট নোটিসের সুদহারও ৭ শতাংশ উঠে গেছে। এ পরিস্থিতি ঈদ পর্যন্ত থাকলে সমস্যা নেই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি হলে দেশের ব্যাংক খাতের জন্য বড় বিপদের কারণ হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে অতিরিক্ত এ তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। অতিরিক্ত এ তারল্যের মধ্যে ৮৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকাই আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের হাতে। তার পরও এ ব্যাংকগুলোয় নগদ অর্থে টান পড়তে শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার এলসি দায় পরিশোধ করার জন্য প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঘোষিত দরের চেয়েও বেশি দামে ডলার কিনে এলসি দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত সবক’টি ব্যাংকেই নগদ তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৩০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। মুদ্রাবাজারে চাপ সৃষ্টির পেছনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী। তিনি বলেন, তহবিল ব্যয় কমাতে কিছু ব্যাংক কলমানি বাজার থেকে টাকা নিয়ে ঋণ দিয়েছে। ওইসব ব্যাংকই এখন নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে। নিজেদের তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্যই আমরা বাড়তি তারল্য রেখেছিলাম। এখন ব্যাংকগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ধার দিচ্ছি।
প্রয়োজনের নিরিখে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদসহ যেকোনো উৎসবের সময় মুদ্রাবাজারে নগদ তারল্যের চাহিদা বাড়ে। এ মুহূর্তে মুদ্রাবাজারে তারল্যের বাড়তি চাহিদা তারই প্রভাব। আশা করছি, ঈদের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ব্যাংকগুলোকে নিজেদের তহবিল ব্যবস্থাপনার প্রতি আরো বেশি যতœশীল ও সতর্ক হতে হবে।-বণিকবার্তা অন লাইন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com