ইউক্রেনে বাংলাদেশী জাহাজে রকেট হামলায় নিহত নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। ছেলেহারা মায়ের আহাজারি কিছুতেই থামছে না। সারা দেশের মানুষ যখন ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা, তখন হাদিসুরের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে এখনো স্তব্ধ গোটা বাড়ি। প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে। তিনি ওই এলাকার নাদেরিয়া মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশী পণ্যবাহী জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলায় নিহত হন হাদিসুর রহমান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে এবার বিবর্ণ আর আনন্দবিহীন ঈদ পালন করবেন তারা।
হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স জানান, প্রতি বছর ঈদ আসলে পরিবারের সবাইকে পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনে দিতেন ভাই। ঈদে বাড়িতে এসে বিয়ে করার কথা ছিল। এবার ঈদে সবাই আছে, কিন্তু নেই শুধু ভাই। রমজান মাস চলে গিয়ে ঈদ আসছে এখন ভাই না থাকায় আনন্দ সব যেন মাটি হয়ে গেলো আমাদের। হাদিসুরের কথা মনে করিয়ে দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হাদিসের মা রাশিদা বেগম। শোকার্ত মাকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, হাদিস ঈদে বাড়িতে আসলে আমাদের সবার জন্য কেনাকাটা করত। সবার সাথে একসাথে ঈদ করত। এবার ঈদে আমাকে আর কেউ কাপড় কিনে দেবে না। কেউ আর দোয়া চাইবে না। আমাদের ঈদ আনন্দ হাদিসের সাথেই শেষ হয়ে গেছে। হাদিসের মা আরো বলেন, হাদিসুরের কুলখানির আগে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এক লাখ টাকা, সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন এবং বরগুনার পুলিশ সুপার ১৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। তবে ঈদ উপলক্ষে এখনো কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কীভাবে আমাদের ঈদ হবে সেই চিন্তাই করি এখন। পুরো পরিবারের কারো চেয়ে কারো কষ্ট বেদনা কম নেই। বাবাও যেন মেনে নিতে পারছেন না ছেলে হারানোর শোক। ছেলের কথা মনে করিয়ে দিতে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যান বাবা আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ঈদের এমন আনন্দঘন মুহূর্তে হাদিস নেই, ভাবতেই পারছি না। বাবা-ছেলের নানা সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে বিগত বছরের ঈদগুলোতে। হাদিস নেই তো ঈদও নেই। এ প্রসঙ্গে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সুহৃদ সালেহীন বলেন, রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান পুরো গ্রামের মানুষকে শোকাহত করে চলে গেছেন। তার ক্ষতিপূরণ দেয়ার সাধ্য কারো নেই। তবে জেলা প্রসাশনের সাথে কথা বলে হাদিসুরের পরিবারকে সহযোগীতা করা হবে।