চলতি বন্যায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবারের বন্যা যেমন নতুন মাত্রায় ভিন্ন আঙ্গিকে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যরুপে ক্ষতিসাধন করে যাচ্ছে তেমনি ব্যক্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠান। যা সরজমিনে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মরহুম হাজী আব্দুল্লাহ মিয়ার পুত্র বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ ফখরুল ইসলাম যিনি শুধু শুধু একজন ব্যক্তি নন বরং একটি প্রতিষ্ঠান তার ক্ষয়ক্ষতি কখনও পূরন হবার নয়। মাথায় যেন প্রচন্ড এক বজ্রাঘাত নিয়েই তিনি বেঁচে আছেন কোনরকমে। জানা যায়, দীর্ঘ ১২ বছর মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত প্রবাসে থেকে ব্যবসার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দেশে এনে বিভিন্ন ভোক্তাদের সহায়তায় ২০১৫ সালে দিরাই থানার রাজানগর গ্রামে ফখরুল ইসলাম গড়ে তুলেন রেজা ব্রিকস ফিল্ড নামের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সময়ে ৩ থেকে ৫ শত লোক এ ব্যবসায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এবার সাহস করে তিনি ১৪ লক্ষ ইট উৎপাদনের কাজে হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু বন্যা ও ভারী বৃষ্টিতে তার ১৪ লাখ কাচা ইট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর্থিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। কাচা ইট নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি তার ইটভাটার মূল অবকাঠামো (ক্লিন) ভেঙ্গে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আরো ৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ বিপুল পরিমাণ ইটগুলো এখন কেবলই পুড়ামাটি। এগুলো সরিয়ে নিতে শ্রমিক ব্যয় বাবত তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। সার্বিকভাবে রেজা ইটভাটায় ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। একদিকে ইটভাটা অন্যদিকে চলতি বন্যায় দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের চাপতির হাওরে তিনি তার বাপ দাদার রেকর্ডিয়,ক্রয়কৃত ও বর্গা নেয়া ৩৩ একর জমিতে বোরো ধান উৎপাদন করেছিলেন। প্রতি একরে ৬০ মণ হিসেবে তিনি মোট উৎপাদন করেছিলেন ১৯৮০ মন ধান। বন্যায় তার পুরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি ছটাক পরিমাণ ধানও গোলায় তুলতে পারেননি। এতে ২১ লাখ,৩৮ হাজার টাকারও বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তিনি। বোরো ধান ছাড়াও রাজানগর মৌজায় ১৬ একর জমিতে তিনি ভূট্টা চাষ করেছিলেন। ফলন হয়েছিল প্রতি একরে ১৬০ মন ভূট্টা যার বাজারমূল্য ৩০ লাখ ৭২ হাজার টাকা। বন্যায় তার উৎপাদিত ভূট্টাগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একই এলাকায় ৭ একর জমিতে তিনি স্থাপন করেছিলেন আমেনা মৎস্য খামার। এই খামার থেকে প্রায় দেড় লক্ষ পাঙ্গাস মাছ বানের জলে বের হয়ে তার ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। একজন সফল কৃষক, মৎস্যচাষী ও স্থানীয় শিল্পপতি হিসেবে সরকারকে সকল প্রকার আয়কর ভ্যাট রাজস্ব যথারীতি প্রদান করে আসার পরও এবারের বন্যায় সবকিছু মিলিয়ে তিনি ৭ কোটি ১২ লক্ষ ১০ হাজার চারশত টাকার মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এই বিশাল ক্ষতি পূরনে অন্য কোন উপায় না পেয়ে তিনি একেবারেই দিশেহারা হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীতা কামনা করেছেন। ব্যবসায়ী মোঃ ফখরুল ইসলাম বলেন,আমি আমার বিশাল ক্ষতি পূরনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুদান প্রদানের জোর দাবী জানাচ্ছি। এবারের কাল বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ভিকটিম হিসেবে আমাকে অনুদান প্রদানের পাশাপাশি আমার শিল্প প্রতিষ্ঠান রেজা ব্রিকস ফিল্ড কে বাঁচিয়ে রাখতে আমাকে শিল্প ঋন প্রদানের জন্যও আমি সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।