‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে গাইবান্ধার হাজারো মৎস ও পোল্টি খামারিদের চোখে। স্বল্প খরচ হয় বলে আফ্রিকান এই পোকা চাষ করছেন অনেকেই। পোল্টি ও মৎস শিল্পে এই পোকা আধুনিক খাদ্য হিসেবে নতুন সংযোগ হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, গাইবান্ধা জেলায় ১০ হাজারেরও বেশি হাঁস-মুরগি ও মৎস্য খামার রয়েছে। এসব খামারিকে বেশি দামে পোল্ট্রি ফিড কিনে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবারে যোগান দিতে হতো। বাজারে ফিডের মূল্য চড়া হওয়ার কারণে জেলায় ডিম ও মুরগির দামও অনেক বেশি। চলতি বছরের প্রথম দিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাংগার রামধন গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার মামুন। তিনি চাকরি ছেড়ে জন্মস্থানে খামারিদের নতুন স্বপ্ন দেখাতে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পরিচিতি পেলেও চাকরি ছেড়ে নতুন স্বপ্নের বীজ বুনতে আসেন গ্রামের বাড়িতে। তারপর বিদেশি এক বন্ধুর কাছে পরামর্শ পেয়ে আফ্রিকা থেকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই নামের পোকার লার্ভা বা বীজ সংগ্রহ করেন। ইঞ্জিনিয়ার মামুন তার বাড়ির জমিতে গড়ে তোলেন পোকার খামার। অল্প সময়ে তার খামারে এই লার্ভা থেকে তৈরি হয় ব্ল্যাক সোলজার পোকা। শুরু করেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ। এতে সাফল্য আসে মামুনের।
খামারিদের কাছে এই পোকা বা লার্ভা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই পোকা খেয়ে খামারের হাঁস-মুরগি ও মাছ স্বল্প সময়ে স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে। তাই এই পোকা জনপ্রিয়তা পায়। অল্প সময়ে পোকার নাম ছড়িয়ে পড়ে গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন খামারিদের কাছে। খামারিরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে পোকা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে লার্ভাও কিনে নিচ্ছেন চাষের জন্য। জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে খামারও সম্প্রসারিত হয়েছে, চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় সফল খামারি হাজী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি এই পোকার লার্ভা কিনে নিয়ে নিজে চাষ করেছি। লাভবান হয়েছি অল্প সময়ে। খামারেও পোকা ব্যবহার করছি।’ বর্তমানে এই পোকার লার্ভা বা বীজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। অন্তত ৩ হাজারেরও বেশি খামারির কাছে প্রতি মাসে অন্তত ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লার্ভা বিক্রি হয়। প্রতি মাসে এই লার্ভা বিক্রি থেকে তার লাভ আসে অন্তত ৭৫ হাজার থেকে থেকে লাখ টাকা। খামারিদের মৎস চাষে ও হাঁস-মুরগি পালনে সুবিধা হচ্ছে। সুন্দরগঞ্জের বামনডাংগার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আল মামুন বলেন, ‘আমার এই পোকা দিয়ে যদি খামারে সফলতা আসে, তাহলে আমারও সফলতা আসবে। আমার এই পোকার খামারের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়বে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।’ গাইবান্ধা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসার নুর সিদ্দিক বলেন, ‘এই পোকা হাঁস-মুরগির খামারে ব্যবহার করলে জনপ্রিয় হতে পারে। প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে সফলতা আসবে।’
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুদার রহমান সরকার বলেন, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই- একটি আফ্রিকান জাতের পোকা। যদিও এখন হাঁস, মাছ ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, তবে, এটি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে।’