আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার রিপোর্টার শিরীন আবু আকলেহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের একজন সেনা সদস্য তাকে টার্গেট করেই গুলি ছোড়েন যার ফলে তিনি নিহত হন। ফিলিস্তিনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। তদন্তের ফলাফল ঘোষণা করে ফিলিস্তিনের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হত্যার উদ্দেশ্যে দখলদার বাহিনী তাকে গুলি করেছে।’ তবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি একে ‘স্পষ্ট মিথ্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন। পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনের অ্যাটর্নি জেনারেল আকরাম আল-খতিব বলেছেন, যে বুলেট দ্বারা শিরীন আবু আকলেহকে হত্যা করা হয়েছে সেটি ৫.৫৬ এমএম এবং এর চারপাশ স্টিলের আবরণ দিয়ে ঢাকা। সাধারণত ন্যাটো বাহিনী এ ধরনের বুলেট ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, তাদের তদন্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহ যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন ইসরাইলি সেনা তাকে সরাসরি গুলি করে, যেটি তার কপালে লাগে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহ যে জায়গাটিতে গুলিবিদ্ধ হন, সেখানে কোনো গোলাগুলি হয়নি কিংবা কোনো পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেনি। এই গুলি ইসরাইলি বাহিনীর দিক থেকে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ফিলিস্তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শিরীন যে জায়গাটিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেখানে একটি গাছেও গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলি যে উচ্চতায় আঘাত করেছে সেটি দেখে বোঝা যাচ্ছে আবু আকলেহর দেহের উপরের অংশে টার্গেট করেছিল বন্দুকধারী। তবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন। ইসরাইলের সেনাবাহিনীও সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহ হত্যাকা-ের তদন্ত করছে। তারা বলছে, ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা হয়তো তাকে গুলি করেছে।
গত ১১ মে ইসরাইলের দখলকৃত পশ্চিম তীর এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর একটি অভিযান চলাকালে সংবাদ সংগ্রহের সময় ৫১ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহ গুলিতে নিহত হন। ওই ঘটনার পর ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরাইলি বাহিনী ওই গুলি চালিয়েছে, যদিও ইসরাইল তা অস্বীকার করে আসছে।
ইসরাইলের ভাষ্য, এই বুলেট কোথা থেকে এসেছে সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, যে গুলিতে শিরীন আবু আকলেহ নিহত হয়েছেন, সেটি পরীক্ষা করতে চাইলে ফিলিস্তিনিরা সেটি করতে দেয়নি কিংবা তারা যৌথ তদন্তেও রাজি হয়নি। ইসরাইল বলেছে, তারা একজন সৈন্যের অস্ত্র চিহ্নিত করেছে যেখান থেকে হয়তো গুলি করা হতে পারে। কিন্তু বুলেটটি বিশ্লেষণ করা ছাড়া সেটি নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। ফিলিস্তিনের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই বুলেট তারা ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করবে না এবং এর কোনো ছবিও প্রকাশ করবে না। ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, তারা ইসরাইলের তদন্ত বিশ্বাস করেন না। সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহ যখন গুলিবিদ্ধ হন, তখন তিনি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরা অবস্থায় ছিলেন। ওই ভেস্টে ‘প্রেস’ শব্দটি লেখা ছিল। তাছাড়া তার মাথায় ছিল হেলমেট। তিনি যে জায়গাটিতে গুলিবিদ্ধ হন, সেখানে ইসরাইলি সৈন্যদের সাথে ফিলিস্তিনিদের গোলাগুলি চলছিল। ওই সময় তার প্রডিউসার আলী সামুদি কাঁধে গুলিবিদ্ধ হন। তবে তিনি বেঁচে আছেন। সূত্র : বিবিসি