ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় ত্বকের প্রতি যত্নের ধরন। ত্বক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বলে এর প্রতি চাই বিশেষ খেয়াল। এই গরমে ত্বকের যত্নের নানা দিকের কথা বললেন রেড বিউটি স্যালনের রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। শুনেছেন জিনাত জোয়ার্দার রিপা
মৌসুমি ফল ও পানি:গরমে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে ঘামের পরিমাণও বেড়ে যায়। শরীরে তৈরি হয় পানির ঘাটতি। তাই এ সময় বেশি করে পানি পান করা উচিত। দিনে অন্তত আটগ্লাস।
সঙ্গে ডিটক্স ওয়াটারও পান করতে পারেন। এতে শরীর সতেজ থাকবে। এ সময় খাবারে বেশি করে সবজি ও মৌসুমি ফলমূল রাখুন। যেসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো খান। অতিরিক্ত তেল ও মসলা জাতীয় খাবার এসময় এড়িয়ে চলুন। মৌসুমি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে, যা শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন: আমাদের ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে সূর্যের ইউভি-এ ও ইউভি-বি রশ্মি। এর ফলে ত্বকে রোদে পোড়া ভাবের সৃষ্টি হয়। ত্বকে বলিরেখা এবং অকালে বয়সের ছাপ পড়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বাইরে বের হওয়ার আগে তাই ভালোভাবে সানস্ক্রিন মেখে নিতে হবে। শুধু বাইরে বের হলেই নয়, যাঁরা ঘরে থাকেন, তাঁদেরও এসপিএফ-৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
প্রসাধনী ব্যবহার: ১। গ্রীষ্মকালে ত্বকে আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। ২। এ সময়ের জন্য সবচেয়ে ভালো অয়েল ব্যালান্সিং প্রসাধনী। ৩। ঠোঁটে হালকা করে লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন। ৪। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে পারফিউম বা ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন। কিন্তু সরাসরি ত্বকে স্প্রে করবেন না।
বাইরে যাওয়ার আগে: ৫। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে। এ সময় খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াই ভালো। ৬। বাইরে বের হওয়ার সময় সঙ্গে রাখুন সানগ্লাস ও ছাতা। ৭। হালকা সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। কালো পোশাকের বদলে সাদা বা হালকা রঙের পোশাক পরা ভালো। ৮। পায়ে ঘাম ও দুর্গন্ধ হলে খোলা স্যান্ডেল পরাই ভালো। কোনো কারণে মোজা পরলে সেটা প্রতিদিন পাল্টে নিন।
বাইরে থেকে এসে: ১। বাইরে থেকে বাসায় ফিরে পানির ঝাপটা দিয়ে বারবার মুখ ধুয়ে নিন। ২। এরপর ত্বকে টোনার ব্যবহার করুন। ত্বক উজ্জ্বল হবে। ৩। ত্বক পরিষ্কার করার সময় স্ক্র্যাবার ব্যবহার করতে পারলে ভালো। এতে ত্বকের মৃতকোষ ঝরে পড়ে।
যখন দরকার চিকিৎসা: ১। রোদে পুড়ে ত্বক ট্যান বা বাদামি হলে। ২। মুখে র্যাশ উঠলে। ৩। অতিরিক্ত গরমে ত্বকে জ্বালাপড়া শুরু হলে। ৪। ত্বক অনেক বেশি তৈলাক্ত হয়ে গেলে। ৫। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ, সানব্লক ও ক্রিম ব্যবহার করুন।
ত্বক বুঝে যত্ন নিন: গরমে তৈলাক্ত ত্বক থেকে প্রচুর তেল বের হয়। ফলে ত্বক গরম হয়ে যায়। ব্রণ দেখা দেয়। মুলতানি মাটি ১ চা চামচ, গোলাপের পাপড়ির পেস্ট ১ চা চামচ, গোলাপজল ১ টেবিল চামচ, কফি গুঁড়া ১ চা চামচ ও মসুর ডাল ১ চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
স্বাভাবিক ত্বক: মধু ১ চা চামচ, গাঁদা ফুলের পেস্ট ১ চা চামচ, লেবুর রস ১ চা চামচ ও সয়াবিন গুঁড়া ১ চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। স্বাভাবিক ত্বককে স্বাভাবিক রাখতে এই মিশ্রণ ত্বকে লাগাতে পারেন। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক ত্বক: গরমে শুষ্ক ত্বক থেকে বাঁচার জন্য এই মিশ্রণ তৈরি করে নিতে পারেন। মধু ১ চা চামচ, কাঠবাদামের পেস্ট ২ চা চামচ, দুধ ২ চা চামচ ও চন্দন ২ চা চামচ। এই মিশ্রণ ত্বককে মসৃণ, কোমল ও উজ্জ্বল করে।
মিশ্র ত্বক: মিশ্র ত্বক গরমে তৈলাক্ত হয়, কখনো মুখের চামড়াও উঠতে থাকে। কচি ডাবের শাঁস, কমলার রস ১ চা চামচ, বেসন ২ চা চামচ ও কালিজিরার তেল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে লাগাতে হবে। ত্বক নরম, উজ্জ্বল হবে।