এ যেন ঘোর! এ যেন স্বপ্ন! এ তো অবিশ্বাস্য! মিলনের ছোঁড়া বলটা সৈকতের ব্যাটে চুমু খেয়ে সীমানা তখনো ছুঁয়ে সারতে পারেনি, হঠাৎ ব্যাট তুলে লাফিয়ে উঠলেন মাহমুদউল্লাহ। ড্রেসিংরুম থেকে দৌড়ে মাঠে ছুটে আসছে সতীর্থরা। গ্যালারি মুখরিত ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ স্লোগানে। কার্ডিফের বারান্দায় মাশরাফীর উচ্ছ্বাসটা যেন লর্ডসের সৌরভ গাঙ্গুলিকে মনে করায়।
এসব সত্যি তো? নাকি কোনো মায়াবী বিভ্রম! নাকি কোনো সুখস্বপ্ন? ঘুম ভাঙলেই যা মিলিয়ে যায়! এমনই অবিশ্বাসের ঘোর লাগিয়ে দিলেন কৌশলী নাবিকদ্বয়। বিরামহীন প্রচেষ্টায় মহা সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে দুল্যমান তরীটি পৌছিয়েছেন ডাঙায়! রচিত হলো এক অমর কাব্য, ক’বারই বা লেখা হয়েছে প্রত্যাবর্তনের এমন বীরত্বময় গল্প!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
শূন্যতেই শেষ তামিম ইকবাল। অতঃপর ০/১, ১০/২, ১২/৩ থেকে ৩৩/৪; মি. ডিপেন্ডেবলও হয়েছেন কিউই আগ্রাসনের শিকার। কী হবে এবার, কে আছে আর; প্রশ্নটা যখন উঠে, প্রিয় কবি কাজী নজরুলকে তখন মনে ভাসে, মনে পড়ে উপরে বলা সেই ক্রান্তিকাল; ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার!’
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত। এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!! — প্রশ্নটা যখন ফিরছে কাঙালের মতো করে দিক-বেদিক ধাক্কা খেয়ে, অভিজ্ঞ নাবিকের আবির্ভাব তখন দৃশ্যপটে। যেন রূপকথার রাজকুমার হয়ে। ইতিহাস গড়ে তাঁরা ভাঙা তরী ভেড়লেন তীরে!
তাকে নিয়ে মাঠের বাইরে কানাঘুষো চলছিল জোরেশোরে, অনেকের চোখে তো তিনি আসছিলেন ফুরিয়ে। স্বয়ং বিসিবি বসের হুকুম তখন, ‘এবার ওরে বসিয়ে দাও!’ কথাগুলো নিশ্চয়ই তার কানেও পৌঁছেছিল। প্রবল জেদকে তাই মনের মাঝে পুষে রেখে, মহাসমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে দুল্যমান তরীর মাঝি হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটা উঠল তার হাতে। কার্ডিফের কমেন্ট্রি বক্সে নাসের হোসাইনের কণ্ঠে তখন তার স্তুতি–
‘He is a superstar of Bangladesh cricket,
and he played like a superstar today.’
মাথাচাড়া দিয়ে উঠা সমালোচনার কড়া জবাব সাকিব দিলেন সেদিন আবারো। যেনো দাঁতে দাঁত চেপে বাপ্পা মজুমদারের সুরে গেয়ে গেলেন গান– ‘সমালোচকের তোপের মুখে, পড়েছি হাজারবার,
ব্যাট আর বলে, মাঠে দিয়েছি, কঠোর জবাব তার।’ আর মাহমুদউল্লাহ! সে তো বড় মে র খেলোয়াড়। বিশেষজ্ঞরা বাক্যটি বলেছেন বহুবার; মাহমুদউল্লাহ সেদিনও কার্ডিফ বুকে রেখেছেন প্রমাণ তার। যেনো
চিৎকার দিয়ে বলতে চাইলেন এই ম শুধুই আমার! শুধুই আমার! যাহোক তাদের সংঘবদ্ধ লড়াইয়ে সেদিন রুপকথার গল্পকেও হার মানায় কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনের গল্প! স্বপ্নের থেকেও অনেক বেশ কল্পনাতীত! কোন বিশেষণেই কার্ডিফে বাঘেদের এই জয়কে করা যায় না বিশেষায়িত। আর ৯ জুন, ২০১৭ সাল দিনটিও কভুও ভুলবার নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই দিনটি। এই দিনেই যে রচিত হয়েছিল ঘুরে দাঁড়াবার এক মহাকাব্য! #on_this_day. সূত্র: নয়াদিগন্ত অন লাইন