মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন

জ্বালানি ও গ্যাসের সরবরাহ ব্যবস্থাপনা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

সিলেট অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোপুরি গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। তবে বন্যার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় গ্যাসের চাহিদাও বর্তমানে সেখানে কম। অন্যদিকে গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে উৎপাদিত কনডেনসেট প্রক্রিয়াকরণে বেশ কয়েকটি ফ্র্যাকশনেশন প্লান্ট রয়েছে সিলেটে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লান্টটি অবস্থিত রশিদপুরে। এখন পর্যন্ত এ কারখানার কার্যক্রমে বন্যার তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। তবে পানির পরিমাণ বাড়লে সেখানকার ডিজেল, পেট্রল ও অকটেন উৎপাদন বিঘ্নিত হতে পারে। এসজিএফএলের আওতাধীন রশিদপুরের কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টটির দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ৪ হাজার ব্যারেল। গত বছরের মে মাস থেকে কারখানাটিতে ডিজেল, অকটেন ও পেট্রল উৎপাদন করা হচ্ছে। মূলত বিবিয়ানায় উৎপাদিত কনডেনসেট রশিদপুরে প্লান্টে এনে তা প্রক্রিয়াকরণ হয়। বর্তমানে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল বন্যাকবলিত হওয়ায় রশিদপুরসহ অন্যান্য ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টও এখন পানিবন্দি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়লে কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায়ও নেতিবাচক প্রভাবের বড় আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকলেও বন্ধ হয়ে পড়েছে সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ। বন্যায় দুর্ঘটনা এড়াতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ এখন প্রায় বিদ্যুৎহীন। এ দুই জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে অন্তত ৪৫ লাখ। তাদের সবাই এখন ব্ল্যাকআউটের মধ্যে রয়েছেন। বন্যার ভয়াবহতা বাড়ায় নেত্রকোনা, হবিগঞ্জের নতুন নতুন এলাকা এখন প্লাবিত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।
বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে কিনা জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, বন্যার পানির কারণে গ্যাস ফিল্ডগুলোয় এখনো কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। সিলেট গ্যাস ফিল্ড অফিস কিংবা জালালাবাদেও কোনো প্রভাব নেই। তবে পানি আরো বাড়লে কী হতে পারে, সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলে গ্যাস সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। জাতীয় গ্রিডে স্থানীয়ভাবে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসে সিলেট বিভাগ থেকে। দেশের শিল্প-কারখানাগুলোও এ অঞ্চলের গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। চলমান বন্যায় বিভাগটির প্রায় পুরোটাই এখন পানিতে নিমজ্জিত। তুলনামুলক উঁচুতে থাকায় এখনো সেখানকার কোনো গ্যাসক্ষেত্র প্লাবিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পানি আর সামান্য বাড়লেই কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র প্লাবিত হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে গ্যাসক্ষেত্রগুলো পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের সার্বিক সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও তীব্র বর্ষণে সাম্প্রতিক কালের ভয়াবহতম বন্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সিলেট বিভাগ। এরই মধ্যে সেখানকার বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, সড়ক যোগাযোগ, মোবাইল সেবা ও ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় এখনো পানি ঢুকতে পারেনি। তবে বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে এসব গ্যাসক্ষেত্রে কারিগরি ও পরিচালনাগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশের জ্বালানি খাত আবারো চাপে পড়ে যাওয়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে পেট্রোবাংলা-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও এখনো গ্যাসক্ষেত্রগুলো ভালো রয়েছে। সঞ্চালন লাইনের দুই-একটি জায়গায় ত্রুটি রয়েছে। বন্যার কারণে বড় ধরনের কোনো কারিগরি সমস্যা দেখা দিলে সরবরাহ সংকট তৈরি হতে পারে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বন্যার কারণে জালালাবাদ এলাকায় সঞ্চালন লাইনগুলোয় সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেখানে পানি আর মাত্র দেড় ফুট নিচে অবস্থান করছে। যদি এ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। পরিস্থিতি তেমন কিছু হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।হ দেশের মোট ২২টি গ্যাস ফিল্ড থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ২৩৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু সিলেট অঞ্চলের আটটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১৬৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস যাচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, যা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গ্যাসের ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে দৈনিক ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতার তিনটি গ্যাস ফিল্ড পরিচালনা করছে বিদেশী কোম্পানি শেভরন। বাকি পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা করছে স্থানীয় কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (সিজিএফএল)। বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন বিঘ্নিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে সিজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, বন্যার কারণে গ্যাস উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার কোনো শঙ্কা নেই। গ্যাস ফিল্ডগুলো উঁচু জায়গায় হওয়ায় এখনো পানি ওঠেনি। তবে হরিপুর গ্যাস ফিল্ডের কাছাকাছি পানি উঠেছে। কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডও আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। কোম্পানির পক্ষ থেকে বিষয়টি আমরা সাবক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। সিজিএফএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী আব্দুল জলিল প্রামাণিক বলেন, বন্যার কারণে এখনো গ্যাস ফিল্ডগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে কী অবস্থা হতে পারে, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com