(বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকে।
তিনি বলেন, ‘সরকার বা বিরোধী দল যেখানেই আওয়ামী লীগ থাকুক না কেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সর্বদা সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য কাজ করছেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্য যেকোনো দুর্যোগে আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি এবং মানুষকে আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখব।’
সিলেট সার্কিট হাউসে গতকাল মঙ্গলবার সিলেট বিভাগের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ অন্যদের তুলনায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ, তারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধারে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যান, যেখানে অনেকেই পৌঁছাতে পারেননি এবং ওই এলাকার ছবি তাঁকে পাঠিয়েছেন যা উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করেছে।
‘সেই ছবি আমি সেনাপ্রধান, আমাদের অফিস, বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। তারা মানুষকে উদ্ধার করতে পেরেছে,’ বলেন তিনি।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চারটি জেলার ৩৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেখানে ৪৫ লাখের বেশি মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে আছে এবং ৪ দশমিক ১৪ লাখের বেশি মানুষ ১২৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এছাড়া, বন্যা দুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ৩শ’ টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১৩০৭ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে ।
অন্যদিকে বন্যায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং ৪০ হাজার পুকুর ও হেচারি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাতে আনুমানিক ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সিলেটে দু’টি মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ হযরত শাহজালাল (র:) ও হযরত শাহ পরান (র:) এর মাজার জিয়ারত করেন। শেখ হাসিনা সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও তৎসংলগ্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এখানে পৌঁছে অপরাহ্নে প্রথমে বিভাগীয় শহরে হযরত শাহজালাল (র:) এর মাজার জিয়ারত করেন। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহ পরান (র:) এর মাজার পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানেও পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত করেন।
সিলেট, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ সংলগ্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেন। এসময় তাঁকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ‘লো ফ্লাই মোড’ বজায় রেখে উড়তে থাকে। পরে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সিলেট সার্কিট হাউসে যান, সেখানে তাঁর বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এর আগে বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রে পরিণত হওয়া বিশেষ করে সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার্তদের সরিয়ে নিতে এবং অসহায় মানুষকে সাহায্যের জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে কর্তৃপক্ষ সেনা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ইউনিটগুলোকেও ডাকা হয়েছে। শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার ১৫ থেকে ১৮ জুন বন্যা কবলিত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে নগদ ২ কোটি ২ দশমিক ২৫ লাখ টাকা, ৪শ’ মেট্রিক টন চাল এবং ৪১,০০০ প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ করেছে।