থ্রি-জি নেটওয়ার্ক ধীরে ধীরে সংকুচিত করে ফেলা হবে। তারপর একসময় বন্ধ করে দেওয়া হবে এই সেবা। আর ফাইভ-জি ব্যবহার হবে বাণিজ্যিক কাজে, ফলে সক্রিয় থাকবে টু-জি আর ফোর-জি। টু-জি থাকবে সব ধরনের ভয়েস কলের জন্য। আর ফোর-জি থাকবে সবার ব্যবহারের জন্য। কিন্তু ফোর-জির ব্যবহারকারী প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি না পাওয়ায় ফোর-জি ব্যবহারের হার বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নতুন উদ্যোগ। যুক্ত হয়েছে প্যাকেজের বাইরে নতুন প্যাকেজ।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয় ফোর-জি সেবা। তারপর ৪ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু সেই অনুসারে এর ব্যবহারকারী বাড়েনি। গত নভেম্বরে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, ফোর-জি ব্যবহারকারী ৬ কোটি ৯১ লাখ, থ্রি-জি ব্যবহারকারী ৩ কোটি ৬২ লাখ। বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখের বেশি।
যদিও মোবাইল ফোন উৎপাদকরা বলছেন, দেশে ফোর-জি স্মার্টফোনের অপ্রতুলতার কারণে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে না। তাদের দেওয়া তথ্য, দেশে ফোর-জি উপযোগী স্মার্টফোনের সংখ্যা ৪৮ শতাংশ। এই সংখ্যাটি বাড়ছে, তবে আশানুরূপভাবে না বাড়ায় সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ফোর-জি সেটের সঙ্গে ভ্যালু অ্যাডের। এই উদ্যোগে ফোর-জি ব্যবহারকারী বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, করোনার সময় মোবাইল ফোনের যে বিক্রি ছিল, বর্তমানে সেই বিক্রিও নেই। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট একটা বড় কারণ। মানুষ এখন টাকা খরচ করতে কেন যেন সংকোচ বোধ করছেন। তিনি জানান, দেশের বাজার সাধারণত মার্চ মাস থেকে ভালো হতে শুরু করে। বিক্রি বাড়তে থাকে। ঈদের সময় হলে সেই বিক্রি আরও বেড়ে যায়। এবার সেটা হয়নি। ফলে তিনি আশঙ্কা করছেন, এবার ফোনের বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারবে না। ফোর-জির বিক্রিও আশানুরূপ হবে না। তিনি জানান, চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) দেশে প্রায় ৩০ লাখের মতো ফোন সেট বিক্রি হয়েছে, যেখানে আগে মাসে ৩০ লাখের মতো মোবাইল সেট বিক্রি হতো।
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বিভিন্ন সময়ে কো-ব্র্যান্ডেড (কোনও হ্যান্ডসেটের সঙ্গে যৌথভাবে বাজারে আসা) সেট বিক্রি করে থাকে। এগুলো সাধারণত অপারেটরগুলোর টাচপয়েন্টে (কাস্টমার কেয়ার, গ্রাহক সেবা কেন্দ্র) বিক্রির জন্য রাখা হয়। এই ফোন বিক্রির সময় ক্রেতাকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য ভয়েস ও ডাটাসহ (ইন্টারনেট) প্যাকেজ অফার করে। যদিও এগুলো আগে থেকে কমিশন থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। অপারেটরগুলো এই প্যাকেজগুলো নির্ধারিত প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না করার আবেদন জানালে কমিশন কয়েকটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ফোর-জি সেটের বিক্রি বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। কমিশন তার সিদ্ধান্তে বলেছে, ফোর-জি হ্যান্ড সেট ব্যবহারের হার এবং ফোর-জি গ্রাহক বাড়ানোর জন্য ফোর-জি হ্যান্ডসেট সম্পর্কিত যেকোনও অফার অপারেটররা দিতে পারবে এবং এই অফার ৮৫টি প্যাকেজের বাইরে থাকবে। টু-জি বা থ্রি-জি সিমে মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রেও এই প্যাকেজটি প্রযোজ্য হবে। সব হ্যান্ডসেট বান্ডেল করার ক্ষেত্রে কমিশন থেকে কো-ব্র্যান্ডিংয়ের অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে এবং যৌথ প্রমোশনের জন্যও কমিশন থেকে অনাপত্তি নিতে হবে। এছাড়া এ ধরনের প্যাকেজের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্যাকেজের মতো ১০ ডিজিটের আইডি থাকবে এবং প্যাকেজের টাইপ বোঝাতে ভি, ডি, সি, বি, এস, আর ইত্যাদি অক্ষরের পরিবর্তে ইংরেজি জি অক্ষর ব্যবহার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের সব প্যাকেজ (ভয়েস, ডাটা, বান্ডেল) ৮৫টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে। কোনও অবস্থাতেই তা এর বেশি হতে পারবে না। বিটিআরসি এক নির্দেশনা দিয়ে প্যাকেজ সীমিত করেছে। এর আগে একেকটি অপারেটরের প্যাকেজ সংখ্যা দুই থেকে আড়াই শতাধিক ছিল। ফলে গ্রাহকদের জন্য তা ছিল ভোগান্তির অপর নাম। এত প্যাকেজের আড়ালে প্রয়োজনীয় প্যাকেজটিই গ্রাহককে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হতো। তা থেকে উত্তরণের জন্যই এই উদ্যোগ। -বাংলাট্রিবিউন