শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আজ 

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২

রাজনৈতিক মর্যাদা, স্বনির্ভরতা, সাহস, সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাসের প্রতীক 

একটি সুদীর্ঘ অপেক্ষার দিন শেষ । আজ ২৫শে জুন শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। এই সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই উদ্বোধন করবেন। তারপর তিনিই প্রথম সেতুর টোল দিয়ে গাড়ি করে সেতু পার হবেন।
পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত। মুন্সীঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আজ পদ্মা সেতুর প্রথম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি শেষ। সরকারের, সংসদের, বিচার বিভাগের, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা থাকবেন উদ্বোধনীতে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দেশে কর্মরত কূটনীতিকদের, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত বিশষ্টজনদের। মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ ও উদ্বোধনের ফলক উন্মোচনের পর নিজের গাড়ির টোল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম পদ্মা সেতু পেরিয়ে যাবেন ওপারে শরীয়তপুরের জাজিরায়। সেখানে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর কাঠাঁলবাড়ি ঘাট এলাকায় দুপুরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন দলেরও প্রধান শেখ হাসিনা। উদ্বোধনকে ঘিরে পদ্মা সেতু ও দুই প্রান্তের আশেপাশের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বানচালের ষড়যন্ত্রের তথ্য বেশ কিছুদিন আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে অবহিত করে দেশজুড়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। ২০২০ সালে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ শেষ হয়। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই এক্সপ্রেসওয়ে আগে থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে। আজ শনিবার উদ্বোধনের পর রোববার থেকে সবার সেতু পেরুবার দিন শুরু হবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য সুখবর: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যবদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে পদ্মা সেতু। এই সেতু ঘিরেই সোনালি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন এই অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ কাড়বে, গড়ে উঠবে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা। এ সেতু দিয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারবে এশিয়ান হাইওয়েতে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা হচ্ছে- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।
নানা কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় ও ব্যয় দুটিই বেড়েছে। শুরুতে এর ব্যয় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ধরা হলেও সর্বশেষ তা তিনগুণ বেড়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায়। অপরদিকে নকশা প্রণয়ন শুরুর পর ২০১৩ সালে সেতু চালুর ঘোষণা থাকলেও নানা জটিলতায় তা বার বারই পেছাতে হয়েছে। এই সেতু জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২২ সালের মার্চে। এক পর্যায়ে সেটিও সম্ভব হয়নি। অবশেষে আগামী ২৫ জুন কাক্সিক্ষত এই সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেলেও বর্তমানে এটির ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জানা গেছে, ২০০৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে শুরুতে পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের পর ২০১৩ সালে সেতু চালুর ঘোষণা থাকলেও পরবর্তীতে নির্মাণের ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৮ সালের মধ্যে চালুর সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০২১ সালের ডিসেম্বরেও সেটি হয়নি। জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রথম প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের পর পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এ প্রকল্পটি সংশোধন না করে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা ছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু মোট ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ হেক্টর। অতিরিক্ত জমি বাবদ মোট ব্যয় প্রয়োজন হয়েছে ২ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এসব কারণেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে ভূমিসহ অধিগ্রহণ বাবদ আরও এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়েছিল। করোনা, বন্যা, পাইলিং জটিলতাসহ নানা কারণে সেতুটির নির্মাণ সময় ৫ দফা বেড়েছে।
একনজরে সেতু: প্রকল্পের নাম: পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। প্রকল্পের অবস্থান: রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। দেশের মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় প্রকল্পের অবস্থান। সেতুর উত্তর প্রান্তে মাওয়া, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ এবং দক্ষিণ প্রান্তে জাজিরা, শরীয়তপুর, শিবচর ও মাদারীপুর। যেভাবে শুরু হয়েছে- ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়।
একনেক সভায় অনুমোদন : ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ে। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন।
প্রকল্পের মেয়াদ : ১ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ৩০ জুন ২০২৩। পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া: পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ অঙ্গীকার করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ তুলে এই অঙ্গীকার থেকে সংস্থাটি সরে যায়। এ ধরনের কাজের শর্ত অনুযায়ী মূল ঋণদাতা চলে গেলে চলে যায় অন্যরাও। কাজেই একে একে এডিবি, জাইকা ও আইডিবিও চলে যায়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
ঋণচুক্তি অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর থেকে ৩৫ বছরে অর্থ বিভাগের ঋণ পরিশোধ করা হবে। আর সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী, প্রতি অর্থবছরে প্রায় সর্বনি¤œ ৮২৬ কোটি থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। ত্রৈমাসিক হিসেবে প্রতি বছর চারটি ও ৩৫ বছরে মোট ১৪০টি কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কিস্তি-পরবর্তী ঋণ স্থিতির ওপর সুদ হিসাব করা হয়েছে। এছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষ চাইলে সুদসহ অর্থ অগ্রিমও পরিশোধ করতে পারবে। তবে কোনো কারণে একটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে, তা পরবর্তী কিস্তির সঙ্গে বকেয়াসহ পরিশোধ করতে হবে।
প্রকল্পের মোট ব্যয়: ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। মূল সেতুর ঠিকাদার: পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। মূল চুক্তিমূল্য: ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কাজের মূল সময়সীমা: ৪৮ মাস। বর্ধিত সময় ৪৩ মাস। কাজ সমাপ্তির পুনর্র্নিধারিত তারিখ: ৩০ জুন, ২০২২।
নকশা: আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএমের (অঊঈঙগ) নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল। ধরন: পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট। প্রধান উপকরণ: কংক্রিট ও স্টিল। রক্ষণাবেক্ষণ: বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। দৈর্ঘ্য: পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
প্রস্থ: পদ্মা সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার। পানির স্তর থেকে উচ্চতা: ৬০ ফুট। পাইলিং গভীরতা: ৩৮৩ ফুট। মোট পিলার: ৪২টি। মোট পাইলিং: ২৮৬টি। সংযোগ সড়ক: পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার। মোট লোকবল: পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ। নদীশাসন: প্রকল্প এলাকায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া এলাকায় ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং বাকি ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার জাজিরা এলাকায়। ঠিকাদারের নাম: সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড চায়না। ভূমি অধিগ্রহণ: ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর। অ্যাপ্রোচ রোড: জাজিরা ও মাওয়া। সেতু পাড়ে বৃক্ষরোপণ: লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪ লক্ষাধিক। পদ্মা সেতু জাদুঘর স্থাপন: পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর প্রতিষ্ঠা’র জন্য নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ চলমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ‘পদ্মা সেতুর আসলে কোনো শত্রু নেই’ শিরোনামে এক নিবন্ধে লিখেছেন,‘পদ্মা সেতুর আসলে কোনো শত্রু নেই। আওয়ামী লীগ আমলে সরকারি অর্থায়নে এই সেতুর প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি হয় ১৯৯৮-৯৯ সালে। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি এই সেতুর পরিকল্পনার কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে নানাভাবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সেতুর চারটি সম্ভাব্য রুটের মধ্যে মাওয়া-জাজিরা রুটকে চূড়ান্ত করা, এর ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করা। জাইকার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় সম্পন্ন এসব কাজের ওপর রিপোর্ট তখনকার পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়। বিডিনিউজের ২০০৫ সালের ১৫ মের সংবাদ অনুসারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর কাজ অবিলম্বে শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন। ২০০৬ সালে তাঁর শাসনামলের শেষ দিকে জমির অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনাও নেওয়া হয়।
বিএনপি তাহলে এই সেতুর বিরোধী হয় কীভাবে? আমার মনে পড়ে, তখনকার সময় খুব সম্ভবত পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ দিয়ে এই সেতু নির্মাণের জন্য আন্দোলন হয়েছিল। মাওয়া-জাজিরা দিয়ে পদ্মা সেতু হলে ঐতিহ্যভাবে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত অঞ্চলগুলোর লোক বেশি সুবিধা পাবেন এই যুক্তি তখন দেওয়া হয়েছিল। তারপরও সবচেয়ে ভালো রুট হিসেবে একেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল বিএনপির আমলে।
পরে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে এই সেতু নির্মাণকাজটি শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক এই সেতুর জন্য ঋণ বাতিল করলে পরের মাসেই সব প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এই ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তিনি সেতু নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
পদ্মা সেতু আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অক্ষয় মেলবন্ধন তৈরি করেছে। এই মেলবন্ধন বাংলাদেশের রাজনীতি আর সমাজে সম্ভব না হয়তো। কিন্তু এই সেতু চালু হওয়ার আনন্দে শামিল হতে পারি আমরা সবাই। তাদের নেত্রীকে নিয়ে কটু কথা বলার কারণে পদ্মা সেতুর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে বিএনপি। আশা করব তারা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে এবং পদ্মা সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি অসাধারণ স্মারক। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে এই সেতু নির্মাণের ঋণ বাতিল করে দিলে অন্যান্য দাতাগোষ্ঠী ও ব্যাংকও সরে পড়ে। যাঁকে নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার থেকে সেই যোগাযোগমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, সংশ্লিষ্ট সচিবকে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং নাগরিক সমাজের নেতারা। এই সমালোচনা অনাকাঙ্ক্ষিত হতে পারে, এর মধ্যে বাড়াবাড়ি এমনকি বিদ্বেষও থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ঠিক আগের বিএনপি আমলেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে আওয়ামী লীগ তো বটেই, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও বিএনপি সরকারের কঠোর সমালোচনায় বিন্দুমাত্র পিছপা হতো না।
আওয়ামী আমলে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির প্রসঙ্গে সমালোচনায় তাই নতুন কিছু ছিল না। তবে মূল কথা হচ্ছে, এসব সমালোচনার একটিও পদ্মা সেতুর নির্মাণের বিরোধিতা ছিল না। বাংলাদেশে কোনো দিন কেউ বলেনি, পদ্মা সেতু নির্মাণ করা উচিত নয় বা এটি করা ঠিক হবে না। দুর্নীতির অভিযোগের কারণে যে সমালোচনা, সেই কারণে এই সেতুর কেউ তাই প্রতিপক্ষ হয়ে যেতে পারেন না। অতীতে যমুনা সেতু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন আওয়ামী লীগ সারা দেশে হরতাল ডেকেছিল। এই আওয়ামী লীগই পরে সেতুটির অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেছিল, এটির উদ্বোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করেছিল। যমুনা সেতু হোক, পদ্মা সেতু হোক, অধিকাংশ দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়সাপেক্ষ নির্মাণকাজ বিভিন্ন আমলে কমবেশি অব্যাহত থেকেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর প্রদান করে এ ধরনের যেকোনো নির্মাণের অর্থ জুগিয়েছে সব স্তরের জনগণ, শুধু আওয়ামী লীগ বা শুধু বিএনপির লোকজন নয়। অন্য সব সেতুর মতোই তাই পদ্মা সেতুও বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের, প্রতিটি দল ও মহলের। পদ্মা সেতু আমাদের রাজনৈতিক মর্যাদা, স্বনির্ভরতা, সাহস, সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।”




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com