মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

বন্যাকবলিত এলাকায় মৃত্যু বেড়ে ৮৪ জন

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২

বন্যাকবলিত এলাকায় এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে, বজ্রপাতে এবং সর্প দংশনে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২ জন। এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৫৮ জন, বজ্রপাতে ১৪ জন, সর্প দংশনে ২ জন এবং বাকীরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে সিলেট বিভাগে ৫২ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বন্যা সম্পর্কিত নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। উল্লিখিত তথ্য গত ১৭ই মে থেকে ২৬শে জুন পর্যন্ত বন্যা সম্পর্কিত এলাকার বলে জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, বন্যাকবলিত এলাকায় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৯০ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ৪ হাজার ১১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫২ জন। এরমধ্যে সিলেটে বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৭৩ জন।
সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে পানিবাহিত রোগ-বালাই। জ্বর-সর্দি, আমাশয়, ডায়রিয়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বানভাসিরা। এদিকে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কমছে প্লাবিত বিভিন্ন উপজেলার পানি। পাশাপাশি জেলার সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনও পানিবন্দি জেলার লক্ষাধিক মানুষ। ৪৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন বানভাসিরা। বানভাসিরা জানান, বন্যার পানিতে হাওর এলাকার সব টিউবওয়েল তলিয়ে গেছে। সেজন্য আমরা বিশুদ্ধ পানি খেতে পারছি না। হাওর ও নদীর পানি খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। যার ফলে আমাদের শিশু ও বয়ষ্করা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের ভাদেরটেক এলাকার বাসিন্দা হুসেন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বন্যার পানি কমলেও আমরা ভালো পানি খেতে পারছি না। যার ফলে বিভিন্ন রোগে দেখা দিচ্ছে।
সুনামগঞ্জের আলীপুর এলাকার বাসিন্দা জাবেদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বন্যার পানি আসার পর থেকে আমরা দুর্গতির মধ্যে আছি। কারো ঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কারো বা গরু ছাগল। শুধু তাই না, বন্যার পানিতে সবগুলো টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় পচা পানি খেয়ে আমাদের জীবন চালাতে হচ্ছে। যার ফলে শিশু ও বৃদ্ধরা জ্বর-সর্দি, আমাশয়, ডায়রিয়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের আলীপুর এলাকার বাসিন্দা নূর নাহার জাগো নিউজকে বলেন, হাওরের পানিতে মরা মানুষ, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন মরা পশু-পাখির পচার গন্ধ। আমরা সেই পানি খেয়ে বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হচ্ছি।
তিনি বলেন, চারদিকে পানি আর পানি। খাদ্য সামগ্রী যেভাবে এসে আমাদের দিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেভাবে যদি ডাক্তাররা বাড়ি বাড়ি এসে আমাদের দেখে যেত তাহলে হয়ত আমাদের জীবনটা বাঁচত। তবে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব তেমন একটা দেখা যায়নি। ১২৩টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাবার স্যালাইন, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট মজুত আছে।
‘শুকনা ধান পইচা গেছে, কী খাইয়া বাঁচবাম?’ আলাল উদ্দিন এবার ১৫০ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। ধান যখন পাকতে শুরু হয়, তখন আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যেতে থাকে। শ্রমিক না পাওয়ায় দুই ছেলেকে নিয়ে দ্রুত ধান কাটতে থাকেন। তবে অর্ধেক ক্ষেতের ধানই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আর ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি। সেটা গত মে মাসের প্রথম দিকের কথা। কিন্তু যে ধান ও খড় শুকিয়ে ঘরে তুলেছিলেন এবারের বন্যায় সেটাও শেষ হয়ে গেলো। ছয়দিন ধরে তার ঘরের মাচার ধান ও পুঞ্জির খড় পানিতে ডুবে ছিল। তবু হাল ছাড়েননি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ওই কৃষক।
শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেলো আলাল উদ্দিন স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাড়ির সামনে কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় পচা ধান ও খড় রোদে শুকাচ্ছেন। কিন্তু পানিতে ডুবে থাকার ফলে সিদ্ধ ধানগুলো পচে দুর্গন্ধ ছাড়চ্ছে। ধানের খড়ও পচে গেছে।
আলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই ধান দিয়াই আমার দুই ছেলের স্কুলের খরচসহ সারা বছরের সংসার খরচ চলে। এবারের বন্যায় আমার সব শেষ। গত মাসের পানিতে ক্ষেতের অর্ধেক ধানই ডুইব্বা পইচা গেছে। আর যে ধান কাইট্টা শুকাইয়া ঘরে তুলছিলাম, এক সপ্তাহ ঘরের ভেতর পানির নিচে থাইক্কা তাও গেছে। অহন এই পচা ধান, খেড় আর দুইডা গরু ছাড়া কিছুই নাই। সব নষ্ট হইয়া গেছে। অহন কী খাইয়া বাঁচবাম? বন্যার পানিতে দুইডা ছাগল, হাঁস-মুরগি ভাইসা গেছে। ঘরের থালবাসনডি খালি আছে আর সব শেষ।’
আলাল উদ্দিনের স্ত্রী ছালেমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই পচা ধানই আমরার সম্বল। আইজ বালা রইদ উঠছে। বাড়িতে অহনো পানি থাহনে রাস্তায় আইন্না তা শুকাইতাছি। এই পচাগলা ধান থাইক্কা যদি কিছু চাউল বাইর হয় তাই খাওন লাগবো।’
এদিকে নেত্রকোনায় সবগুলো নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। জেলার দশ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নে ৫ লাখ ৫৪ হাজার মানুষ বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় ধীরে ধীরে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করেছে বানভাসিরা। নেত্রকোনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত জানিয়েছেন, জেলার ছোটবড় সবগুলো নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করছে। তবে উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন থেকে ৫১২ মেট্রিক টন চাল ও ২৭ লাখ টাকাসহ ৫ হাজার ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com