মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কৃতকর্মের জন্য গোটা জাতির কাছে তার ক্ষমতা চাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। খবর এনডিটিভির। গত মে মাসে এক টেলিভিশন বিতর্কে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন নূপুর শর্মা। এরপর তার বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন স্থানে এফআইআর দায়ের হয়। সেসব এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তরের জন্য গতকাল শুক্রবার (১ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তিনি।
শুনানিতে নূপুর শর্মার আইনজীবী দাবি করেন, তার মক্কেল হুমকির মুখে রয়েছেন। জবাবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, তিনি হুমকির মুখে রয়েছেন নাকি নিজেই নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠেছেন? তিনি দেশজুড়ে (ধর্মীয়) আবেগ উসকে দিয়েছেন। দেশে যা কিছু ঘটছে, তার জন্য এই নারী একাই দায়ী।
বিচারপতি বলেন, কীভাবে তিনি (নূপুর শর্মা) বিতর্ক উসকে দিয়েছেন তা আমরা দেখেছি। কিন্তু যেভাবে তিনি পুরো বিষয়টি বললেন এবং পরবর্তীতে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিলেন, তা লজ্জাজনক। তার উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেন, নূপুর শর্মার মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তার ‘একগুঁয়ে ও অহংকারী আচরণ’ প্রকাশ পেয়েছে। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, তিনি (নূপুর শর্মা) একটি দলের মুখপাত্র হলে যা হয়। তিনি ভেবেছেন, তার প্রতি সরকারের সমর্থন রয়েছে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়াই যেকোনো বক্তব্য দিতে পারেন।
এসময় নূপুর শর্মার আইনজীবী বলেন, তিনি কেবল টেলিভিশন বিতর্কে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। জবাবে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, তাহলে সঞ্চালকের বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিত। মুক্ত সাংবাদিকতার অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত করা না হয়- এ সংক্রান্ত একটি আদেশের কথা উল্লেখ করে নূপুর শর্মার পক্ষে যুক্তি দেখান তার আইনজীবী। জবাবে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, তাকে (নূপুর শর্মা) সাংবাদিকের আসনে বসানো যায় না। (বিশেষ করে) যখন তিনি টিভি বিতর্কে গিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন এবং সমাজের কাঠামোতে এর প্রভাব ও পরিণতির কথা চিন্তা না করে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেন।
এসময় টিভি চ্যানেল ও দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতিরা বলেন, দিল্লি পুলিশ কী করেছে? আমাদের মুখ খোলাবেন না, টিভিতে বিতর্ক কী নিয়ে ছিল? তারা কেন একটি বিচারাধীন বিষয় বেছে নিলো? নূপুর শর্মার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বলেন, আপনারা যখন অন্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন, তারা তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার হন। কিন্তু যখন অভিযোগ আপনাদের বিরুদ্ধে, তখন কেউ আপনাদের স্পর্শ করার সাহস পায় না। এদিন সারা দেশে দায়ের হওয়া এফআইআরগুলো দিল্লিতে স্থানান্তরে নূপুর শর্মার আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। গত ২৬ মে এক টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়ে মহানবী (সা.)–কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বিজেপির তৎকালীন মুখপাত্র নূপুর শর্মা। এরপর দলটির দিল্লি শাখার গণমাধ্যমপ্রধান নবীন কুমার জিন্দালও মহানবী সম্পর্কে টুইটারে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন ভারতের মুসলিমরা। প্রতিবাদে সরব হয় মুসলিমপ্রধান অন্য দেশগুলোও। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে নূপুর শর্মাকে সাময়িক বরখাস্ত ও জিন্দালকে বহিষ্কার করে বিজেপি।