প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এই সিদ্ধান্তে প্রতি দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে অটল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আমরা যদি অতীতের মতো নির্বাচনের ফাঁদে পা না দেই, আমরা যে কথা বলেছি, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন নয়, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়- এই সিদ্ধান্তে যদি শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে পারি, তাহলে শেখ হাসিনা সরকার নাই। তার নির্বাচন করার ক্ষমতা নাই নাই নাই।’ তিনি বলেন, এই সরকার ভেল্কিবাজি যা করার করেছে; নতুন করে ভেল্কিবাজি করার ক্ষমতা নেই। তাই সব রাজনৈতিক দলের সবাইকে বলব, আপনারা একটা জায়গায় অটল থাকেন- এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়নি প্রমাণ করতে পারলে বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দেয়া হবে জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, অনেকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একটি ধন্যবাদ দিতে পারতেন। আইনমন্ত্রী বললেন, খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দিতে কোনো বাধা নেই। যদি বাধা না থাকে তাহলে খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দিতে বাধা হলো কেন? সরকার আমার নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) দাওয়াত দিলেন না, দাওয়াত দিলেন আমাদের সাতজন নেতাকে। আমরা যদি ওই দাওয়াত কবুল করতাম, তাহলে রাস্তায় হাঁটতে পারতাম? তিনি আরো বলেন, যে প্রকল্পে দুর্নীতি হয়, সেই প্রকল্পের জন্য জনগণ ধন্যবাদ দিতে পারে না। আপনারা শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন যে, কত টাকা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে। দুর্নীতি হয়নি- এটা যদি প্রমাণ করতে পারেন, ধন্যবাদ দেয়া যাবে। সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘এক পাগল দেখলাম জাতীয় সংসদে বলেছে, ড. ইউনূস, বেগম খালেদা জিয়া ও হিলারী ক্লিনটনের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিতে। স্যাংশন শব্দের অর্থ বুঝ? খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়ে রেখেছে, তাকে আর স্যাংশন কি?’ দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ আজ পানিবন্দি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই তারা যাচ্ছে। আগামীকাল শনিবার তিন দিনের জন্য আমরা সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে যাব। সেখানে দুই হাজার বয়স্ক নারী ও শিশুদের মধ্যে কিছু নগদ অর্থসহায়তা দেয়া হবে। নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে এই সহায়তা দেয়া হবে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে আনন্দ-উৎসবের জন্য যে টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তা যদি বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষদের জন্য ব্যয় করত তাহলে সরকার কিঞ্চিত হলেও প্রশংসিত হতে পারত। যার কলঙ্ক ভালো লাগে তাকে সুপরামর্শ দেয়ার যুক্তি নেই। আসলে লজ্জা, শরম নেই। কারণ, যে পরিমাণ গুম, খুন নির্যাতন করা হচ্ছে, এটা ছাড়া তাদের টিকে থাকার উপায়ও নেই। উনি জনগণের ভালোবাসা, আস্থার প্রয়োজন মনে করেন না, উনি মনে করেন যতদিন প্রতিবেশী আছেন, ততোদিন উনি ক্ষমতায় আছেন। সংগঠনের মুহাম্মদ মফিজুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ২০ দলীয় জোটের শরিক ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি প্রমুখ।