গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দপ্তরে দপ্তরে এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে দীর্ঘদিন ঘুরেও একটি ঘর পেলেন না ৮০ বছরের বিধবা এক ভিক্ষুক। ফলে তিনি ভাঙ্গাচুরা ছোট্র একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। অবশেষে রোববার দুপুরে ওই বৃদ্ধা ভিক্ষুককে নতুন ঘরের জন্য টিন উপহার দিলেন একটি সেচ্ছা সেবী সংগঠন। সরকারী ঘর না পেলেও ঘরের জন্য টিন পেয়ে খুশি ওই বৃদ্ধা। ওই বৃদ্ধা হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের কামারিয়া এলাকার মৃত করম আলীর মেয়ে আলেকজান বেগম(৮০)। তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এলাকাবাসী ও ওই সেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় ৩০ বছর আগে আলেকজার বেগমের স্বামী বাবর আলী মারা যান। স্বামী মারা যাবার পর তিনি তার একমাত্র মেয়ে বছিরণকে নিয়ে বাবার বাড়ি উপজেলার কামারিয়া এলাকায় আসতে বাধ্য হন। কিন্তু বাবাও মারা যাবার পর তিনি তার মেয়েকে নিয়ে ছোট্র একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। এরপর অভাব অনটনের মধ্যেও ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ ও একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের পুরোনো ঝুপড়ি ঘরটি এখন ভাঙ্গাচুরা। এক পর্যায় ঘরটি ভেঙ্গে পড়ে এবং বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে তিনি কেবারে অসহায় হয়ে পড়েন। তারপরও অনেক কষ্টে সে ভাঙ্গাচুরা ঝুপড়িতেই কোনো রকমে মানবতার জীবন-যাপন করে আসছিলেন ওই বৃদ্ধা আলেকজান বেগম। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতরে পানি পড়ে। রোদ আর বৃষ্টিসহ নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও অতি কষ্টে ওই ঝুপড়ি ঘরেই তার জীবন-যাপন চলছিল। এজন্য তিনি সরকারী দপ্তরে দপ্তরে ও জনপ্রতিনিধিদের ধারে ধারে ঘুরেও একটি ঘর পাননি ওই ভিক্ষুক। যখন তাঁর সহযোগীতায় কেউই এগিয়ে আসেননি, তখন এগিয়ে আসেন পাশের উত্তর কাঞ্চানপুর এলাকার জনকল্যাণ কল্যাণ যুব সংঘ ক্লাব নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। রোববার দুপুরে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি ঘর তৈরির জন্য টিন উপহার দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা সহকারী সমাজ সেবা অফিসার গোলাম সারোয়ার, ওই সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রতন, ধর্মীয় সম্পাদক রনি হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ওই বৃদ্ধা আলেকজান বেগম বলেন, শুধু বিধবা ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারী সহযোগী পাইনি। শুনেছি, সরকার গরীব মানুষকে ঘর উপহার দিয়েছে। আমি ভিক্ষা করে খাই, কই আমারে তো একটা ঘর দিলো না। আমার ঘরটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর বিভিন্ন দপ্তরে ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেও একটি ঘর পাইনি। সরকারী ঘর না পেলেও এহন আমার ঘর করার জন্য যারা টিন দিয়েছে, তাদের জন্য দোয়া করি। আমি এখন খুব খুশি। ওই সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রতন জানান, এ রকম একজন অসহায় বৃদ্ধাকে ঘরের জন্য টিন দিতে পেরে আমরাও খুবই আনন্দিত। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন শাকিল মোল্লা জানান, আমি ওই বৃদ্ধার বাড়িতে এলাকায় যায়নি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে ওই ভিক্ষুকের কথা জেনেছি। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে সরকারী ঘরসহ বিভিন্ন অনুদানের ব্যবস্থা করবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, উনার ভোটার আইডি কার্ডসহ আবেদন করলে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিবো।