ভরা বিল থেকে পানি আকাশে উঠে যাচ্ছে! পানি বাষ্প হয়ে শূন্যে মিলিয়ে যায়। সে দৃশ্য খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এই দৃশ্য বহুদূর থেকেও দেখা গেছে। যেন বিল থেকে পানি মোটা পাইপ দিয়ে কেউ শূন্যপানে টেনে নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভেসে বেড়াচ্ছে এমন একটি ভিডিও।
ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে। দেখতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ ঘটনার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা আছে। যদিও অনেকে বিষয়টি ‘অলৌকিক’ বলে মনে করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্মিত হয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, এমনকি কয়েকটি নিউজ পোর্টাল এই ঘটনার সংবাদ শিরোনামে ‘অলৌকিক’ শব্দটি জুড়ে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান ড. তওহিদা রাশিদের সঙ্গে।
নাজমুল হক বলেন, এ ধরনের ঘটনার বৈজ্ঞানিক নাম ওয়াটার স্পুট বা জলস্তম্ভ। এ ধরনের স্তম্ভ গভীর পানিতেও হতে পারে, অগভীর পানিতেও হতে পারে। এটা সমুদ্র নদী কিংবা লেকেও হতে পারে। এটাকে অনেকে পানির টর্নেডো বলেন। এই টর্নেডো দুই প্রকার। যাই হোক, মূলত পানির ওপর বাতাস ঘুরতে থাকে এবং কিছু ময়েশ্চার উপরে তুলে নেয়। এটা ফানেল আকারে উপরে উঠতে থাকে (নিচের দিকে চিকন উপরের দিকে মোটা)।
এর স্থায়িত্ব সাধারণত ২০ মিনিটের মতো হয় উল্লেখ করে এই আবহাওয়াবিদ আরো বলেন, একটা ঘূর্ণিঝড়ের গতি সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটায় এবং একটা টর্নেডোর সর্বনি¤œ গতিবেগ ২৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। সুতরাং এর গতিবেগ যথেষ্ট বিপজ্জনক। এবং এ ধরনের জলস্তম্ভের আশেপাশে বাতাসের গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার হয়ে থাকে। যদিও এগুলো খুব ছোট এরিয়া নিয়ে হয়। ড. তওহিদা রাশিদ বলেন, এটি এক ধরনের টর্নেডো। কখনো কখনো শক্তিশালী হয়ে উপরের দিকে বাতাস টেনে নিয়ে যায়। টর্নেডো মাটিতে হলে বাড়িঘর উপরে নিয়ে যায় এবং পানিতে হলে পানি ও অন্যন্য উপাদান নিয়ে যায়। ঘূর্নিঝড় যখন শক্তিশালী রূপ নেয় সেটাই টর্নেডো।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম টর্নেডোপ্রবণ দেশ। কানাডা, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড, জাপান, ভারত প্রভৃতি দেশ এই তালিকায় রয়েছে। ১৯৮৯ সালে মানিকগঞ্জে ‘দৌলতিয়া-সাটুরিয়া টর্নেডো’কে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী টর্নেডো মনে করা হয়। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪১৮ কিলোমিটার। এ ঘটনায় ১৩০০ জনের মৃত্যু হয়। – রাইজিংবিডি.কম