নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলার হাতিয়ার বেশিরভাগ জেলের মুখে হাসি নেই। ভরা মৌসুমেও তারা নদীতে ইলিশ না পেয়ে হতাশায় রয়েছেন। তবে গুটিকয়েক সাগরে যাওয়া জেলে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পেয়ে খোশ মেজাজে রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে খরব নিয়ে জানা গেছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে যাওয়া জেলেরা মাছ না পেয়ে প্রতিদিন লোকসান গুনছেন। অন্যদিকে, সাগরে যাওয়া হাতেগোনা কয়েকজন জেলে মাছ পেয়ে খুশি। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, হাতিয়ার ২৩ হাজারসহ জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তবে অনিবন্ধিত জেলেসহ জেলায় মোট ৫০ হাজার জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৪৯ হাজার জেলেই আশপাশের নদীতে এবং বাকি এক হাজার জেলে সাগরে মাছ ধরেন। তাও স্থানীয়ভাবে সাগরে যাওয়া বোট কম থাকায় জেলার বাইরের বোটে গিয়ে সাগরে মাছ ধরেন এখানকার অনেক জেলে। জেলার ৯৮ শতাংশ জেলেই নদীতে মাছ ধরেন। আর বাকি দুই শতাংশ জেলে বিভিন্ন জেলার বোটে সমুদ্রে মাছ ধরেন।
আনোয়ার মাঝি দীর্ঘদিন নদীতে মাছ ধরেন। চেয়ারম্যান ঘাটে নৌকায় বসে জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে মাঝি-মাল্লা নিয়ে নদীতে মাছ ধরে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টা ইলিশ পাচ্ছেন। এতে বোট ও জেলেদের দৈনন্দিন খরচও উঠাতে পারছেন না। তবুও বাপ-দাদার এ পেশায় ভালো করার আশায় আঁকড়ে ধরে পড়ে আছেন। তার ধারণা, সামনের কটালে (পূর্ণিমায়) নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যেতে পারে। সাগরে যাওয়া জহির মাঝি জাগো নিউজকে বলেন, আবহাওয়া বুঝে সাগরে যেতে হয়। গভীর সমুদ্রে যেতে পারলে ভালো ইলিশ পাওয়া যায়। সেগুলো আকারেও বড়। সাগরে গিয়ে ফিরে আসতে প্রতি বোটে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। এবার ফিরে এসে তিনি ২৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। এই ট্রিপই এবারের সেরা। তিনি আরও বলেন, তবে নদীতে ইলিশ পাওয়া গেলে খরচ ও সময় অনেক কম লাগতো এবং বেশিরভাগ জেলে উপকৃত হতো। হাতিয়ায় মাছ বেচাকেনার ৮০টি ঘাট রয়েছে। অন্যবছর এমন সময়ে ঘাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠলেও এবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় তা জমে উঠেনি। অনেক ঘাটেই অর্থলগ্নি করে এখন হতাশ ব্যবসায়ীরা।
হাতিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আকতার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নদীতে ইলিশ না পেয়ে বেশিরভাগ জেলে হতাশ। তবে আশা করা যায়, সামনে নদীতেও ইলিশ পাওয়া যাবে। চেয়ারম্যান ঘাটের মেঘনা ফিশারিজের ব্যবস্থাপক মো. হাবিব উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, সাগরের বোটগুলো মাছ নিয়ে চাঁদপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম চলে যায়। নদীতে এখনো ইলিশ না পাওয়ায় হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর অনুরোধে দু-তিনটি সাগরের বোট এ ঘাটে ভিড়েছে। সেগুলোতে কিছু ইলিশ পাওয়া গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন নদীতে ইলিশ না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি হয়েছে। তবে বর্ষায় বৃষ্টি না থাকায় নদীতে ইলিশ আসছে না। সামনে আশা করি, নদীতেও ইলিশ পাওয়া যাবে। নোয়াখালীতে সমুদ্রে যাওয়া বোট কম থাকায় এখানে এখনো কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না।