কোচিং ও প্রাইভটে টিউশনি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখাসহ প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ার ওপর ছয়টি সুপারিশ তুলে ধরেছে গণসাক্ষরতা অভিযান। গতকাল রবিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর পিকেএসএফ সভাকক্ষে ‘শিক্ষা আইন: নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গণসাক্ষরতা এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এই সুাপারিশ তুলে ধরেন। এ সময় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, উপরিচালক কে এম এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০’-এর আলোকে ২০১২ সালে সরকার একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ সালে একটি খসড়া আইন সবার মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচের সমন্বয়ে নাগরিক সমাজের মতামত সংকলন করে ওই সময় তখন কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আইনটির চূড়ান্ত রূপ আমরা এখনও দেখিনি। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই ‘সমন্বিত শিক্ষা আইনটি’ প্রণীত হবে আমরা আশাবাদী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, যথাযথ আইন প্রণীত না হলে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা অধিকারের বিষয়টি আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ছয় সুপারিশ: ১. ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ অতি দ্রুত প্রণয়ন ও গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। ২. ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতকৃত শিক্ষা আইন, ২০১৬-এর খসড়ার ওপর মতামত প্রদানের আহ্বান করা হলে, গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও মতবিনিময় করে একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করে এবং তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পেশ করে। সেই সুপারিশমালার আলোকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া পরিমার্জন করা হয়েছে কিনা, বা এ সংক্রান্ত কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা সবার জানা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। ৩. নতুন খসড়া আইন হয়ে থাকলে তা মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপনের আগে প্রকাশ করা জরুরি, যাতে সংশ্লিষ্ট এবং আগ্রহী কেউ থাকলে, তাদের মতামত দিতে পারেন। বিশেষ করে শিক্ষা অধিকার, নোট বই, গাইড বই, কোচিং বাণিজ্য রোধে প্রস্তাবিত আইনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যম ও ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য নিরসনে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এ সব বিষয়ে নাগরিক সমাজকে জানানো এবং তাদের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। ৪. এছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও কোভিড প্রতিঘাত বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটও আইনে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচ্য। ৫. শিক্ষা বিষয়ে যথাযথ দিক-নির্দেশনা প্রণয়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের’ বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা প্রকাশ করে এ সব বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। ৬. অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের অধিকার হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের সংবিধানে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব হিসেবে বিধৃত, শিশুর অধিকার হিসেবে নয়। উদাহরণ স্বরূপ ভারতে মৌলিক শিক্ষা শিশুর অধিকার হিসেবে আইনীভাবে স্বীকৃত।