শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:২০ অপরাহ্ন

কবিরহাট বাটইয়াতে সংস্কারের অভাবে ধবংসের পথে তিন শতকের মোঘল আমলের মসজিদ

সিরাজ উল্লাহ (কোম্পানীগঞ্জ) নোয়াখালী :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতরামদি গ্রামে অবস্থিত রমজান মিয়া জামে মসজিদ স্থানীয়দের কাছে মোটকালা (আঞ্চলিক) মসজিদ আবার কারো মুখে সরকারি মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে আছে এই মসজিদটি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই ঐতিহাসিক পুরোনো মোঘল আমলের এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি দেখতে ছুটে আসেন। মসজিদটি মোঘল আমলের স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে। স্থানীয়দের ধারনা মতে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ কিংবা তারও আগে পাঁচ শতাংশ জমির ওপরে মরহুম রমজান মিয়ার নামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়ে ছিল। মসজিদটি ৩১ ফুট দৈঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের এ মসজিদের ছাদে মাঝখান একটি এবং দুই পাশে দুটি গম্বুজ রয়েছে যা পুরো ছাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। গম্বুজগুলো মোঘল স্থাপত্য শিল্পের আদলে বিভিন্ন কারুকাজ সজ্জিত তৈরি করা হয়। মসজিদটির সামনের দিকে রয়েছে তিনটি প্রবেশদ্বার একটি বড় ও অন্য দুইটি ছোট আকারের। চওড়া আকারের দেয়ালগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যের চিহ্ন। পশ্চিম পাশের দেওয়ালে রয়েছে একটি বড় এবং দুটি ছোট সহ তিনটি মিম্বার।আরো আছে ১২টি পিলার ও দুটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটির ছাদে প্রত্যেক মাথায় একটি করে মিনার রয়েছে, যার মধ্যে চারটি বড়। আরো আছে মসজিদের বাহিরে একটি মক্তব ঘর, খোলা বারান্দা সামনে আছে খোলা চাষাবাদ জমি তার ওপরপার্শে আছে কালো পিজ ঢালা রোড সামনে আছে একটি বিশাল দিঘি, চারপাশে রয়েছে মনোরম দৃশ্য। উপস্থিত স্থানীয় যুবক ও বয়স্ক মুসল্লীদের অনেককে বলতে দেখা গেছে তারা এই মসজিদে নামাজ ও মক্তবে পড়ালেখা করেছিলেন। দীর্ঘ এক যোগের বেশি সময় ধরে মসজিদের মক্তব বন্ধ আছে এবং মসজিদে মুসল্লী সংখ্যাও কমে গেছে। মসজিদ সংস্কার করতে না পারায় এবং কমিটির অন্তকোন্দলে জেরে এই মসজিদকে ঘিরে আশপাশে অনেক গুলো মসজিদ নির্মাণ হয়েছে। স্থানীয় ষাট উর্ধে বয়স্ক ব্যাক্তিরা বলছে এক সময় আমাদের সমাজ ছিল একটি এবং মসজিদও ছিল একটি কিন্তু বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার ও কমিটির কোন্দলের কারনে মুসল্লীদের নানান ভাগে বিভক্ত হয়ে কয়েকটি সমাজ এবং কয়েকটি মসজিদ তৈরি হয়ে গেছে।যদিও ৩০ জনের বেশি মুসল্লির জায়গা না হওয়ার কারণে মসজিদটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের কথা উঠলেও পুরোনো স্থাপত্যের নিদর্শন স্বরুপ এখনো সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির নির্মাণ অত্যন্ত চমৎকার। শুরু থেকে ইট, বালু, চুন-সুরকি দ্বারা এটি নির্মিত। যদিও পরে একাধিকবার এর সংস্করণ করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে বাইরে সিমেন্টের প্লাস্টার, গম্বুজে নানান রং লাগিয়ে এবং ভেতরে টাইলসের কাজ করা হয়েছে। প্রাচীন মসজিদ হওয়ায় দুর দুরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী দেখতে আসে। মসজিদে বড় বড় তিনটি গম্বুজ রয়েছে। ভেতরে দুই সফ (কাতার) রয়েছে যেখানে ৩০ জনের কম বেশির মত নামাজ পড়তে পারে। মসজিদটি অনেক পুরাতন ও প্রাচীন তাই এর সংস্কার করা জরুরি বলে মনে করে স্থানীয় মুসল্লীরা। বর্তমানে মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুল আজিজ তিনিও স্থানীয় বাসিন্দা বলে জানা যায়।এই দিকে স্থানীয় বাসিন্দা এইচ হোসেন ইমরান শান্ত দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সাংবাদিক সিরাজ উল্লাহ কে বলেন, মসজিদের বারান্দায় এক সময় মক্তব ছিল পরে মসজিদের সামনে একটি ঘর করে মক্তব করা হয়েছে সেই মক্তবে আমাদের এলাকার ছোট ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করেছিল। দীর্ঘ এক যোগেরও বেশি সময় বছর ধরে মসজিদের মক্তব বন্ধ আছে। মসজিদ সংস্কার করতে না দেওয়ায় এই মসজিদকে ঘিরে আশপাশে অনেক গুলো মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।জানা যায় এক সময় উত্তর আলীপুর গ্রাম, দৌলতরামদি ও দয়ারামদি গ্রাম নিয়ে একটি বিশাল সমাজ ছিল কিন্তু বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার না হওয়া এবং কমিটির ও মুসল্লীদের মতবিরোধের কারণে একটি সমাজ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং মসজিদকে কেন্দ্র করে সমাজও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরা নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন তাদের অনেকের দাদা ও তার পূর্বপুরুষরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। মসজিদের বর্তমান ইমাম হাফেজ আবদুল আজিজ বলেন, ইট-সুরকি দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদে বড় তিনটি গম্বুজ রয়েছে।ধারনা করা হচ্ছে মসজিদটি প্রায় ৩০০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতাদের নাম ছিল শায়খ নূরুল্লাহ চৌধুরী ও শায়খ মুজীর আলী চৌধুরী। স্থানীয় সুত্রে জানা যায় মসজিদের বর্তমান সভাপতি ও মোতায়াল্লি শরিফ উল্যাহ চৌধুরী বাবু তিনি উপস্থিত বাড়ীতে না থাকায় কথা বলা যায়নি। মসজিদটি চৌধুরী বাড়ীর দরজায় ও চৌধুরীদের পুর্বপুরুষরা প্রতিষ্ঠা করায় চৌধুরী বাড়ীর একটা অধিপত্য মসজিদ ঘিরে রয়েছে বলে সরে জমিনে জানা যায়। মসজিদের সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে অর্থের অভাবে কাজ করতে পারছেনা মসজিদ কমিটি এমনটাই জানা যায় বিভিন্ন সুত্রে। প্রাচীন এই স্থাপনার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই মসজিদটির সংস্কার করতে এলাকাবাসী চাই। এই মসজিদ নতুন প্রজন্মের কাছে এটা একটি সুন্দর স্থাপনা হিসেবে গ্রহণযোগ্যেতায় স্থান পাবে এবং ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন রমজান মিয়া জামে মসজিদ তথা চৌধুরী মসজিদ নামেও পরিচিত। ইতিহাসের মোঘল সম্রাজ্যে ঐতিহাসিক এ মসজিদটি নির্মিত হয় প্রায় ৩০০ বছর আগে মোঘল আমলের। মসজিদটি নিয়ে লোকমুখে ছড়িয়ে আছে নানা কাহিনী। সঠিক নজরদারি এবং অপরিকল্পিত সংস্কার কাজের কারণে এর স্থাপত্যশীল্প নষ্ট হওয়ার পথে। এতে হারিয়ে যেতে বসেছে মোঘল আমলে নির্মিত মসজিদটির ইতিহাস-ঐতিহ্য। যথাযথ কর্তৃপক্ষ নজর দিলে এই প্রাচীন মোঘল আমলের স্থাপনা ইতিহাসের ঐতিহ্য ঐতিয্য টিকে থাকবে নতুন প্রজন্মের কাছে এমটাই ধারনা করছে এলাকাবাসী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com