সাব্বির রহমান বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্রের একজন। তিনি এসেছিলেন প্রবল সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু মাঠে ও মাঠের বাইরে একের পর এক সমস্যার কারণে হয়েছেন শিরোনাম। প্রায় তিন বছর পর এই ক্রিকেটার বাংলাদেশের জাতীয় দলের স্কোয়াডে ঢুকেছেন। এ নিয়ে সমর্থকদের একটা পক্ষ খুবই খুশি তাকে নিয়ে, একে তো সাব্বির দুর্দান্ত স্ট্রোকমেকার এবং তিনি ছন্দে থাকলে দর্শকের চোখের জন্য তা সুখকর হয়। আরেক পক্ষ খুব একটা খুশি হতে পারছেন না, এর কারণ সাব্বির রহমান পারফরম্যান্স দিয়ে দলে ঢোকেননি। ক্রিকেট পর্যবেক্ষক মাইদুল আলম বাবু বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা যে সাব্বির রহমানকে শেষবার দেখেছিলাম তিনি ছিলেন মানসিকভাবে ভগ্ন।’ ‘গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা বদলের ভেতর দিয়ে গেছে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগেই খবর এসেছিল যে সাকিব আল হাসান টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অধিনায়ক হচ্ছেন। তিনি নিজের পরিকল্পনাতে সাব্বির রহমানকে রেখেছেন।’
মাইদুল ইসলাম বাবুর মতে, ‘এখনো নিশ্চিত নয় যে সাব্বির ভালো করবেন কী করবেন না। মাঠের খেলা দেখলে বোঝা যাবে সেটা।’ তবে তিনি পরিশ্রম করেছেন। এই বিশ্লেষকের মতো করেই দল ঘোষণার সময় একই কথা বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। নান্নু বলেন, ‘সাব্বির যে মানসিকতা নিয়ে পরিশ্রম করেছে সেটা চোখে পড়ার মতো।’ গত তিন বছরে সাব্বির রহমান আলোচনায় এসেছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাড়ার ক্রিকেটে টেপ টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ খেলে। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, দল থেকে বের হওয়ার পর যেকোনো জায়গায় খেলাই আমার জন্য মূল্যবান। তিনি দল থেকে বাদ পড়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন, যেকোনোভাবে কোনো দলে জায়গা পেতে লড়াই করেছেন তখন তিনি। সেজন্য তার জায়গা ছিল দুটি- বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। একটি টি-টোয়েন্টি এবং আরেকটি ওয়ানডে ফরম্যাটের ঘরোয়া আসর। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি নিয়মিত সুযোগ পাননি ঠিক, যে কয়েকটি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন পুরোপুরি কাজেও লাগাতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ৬ ম্যাচে করেছিলেন ১০৯ রান। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তিনি ম্যাচ পেয়েছিলেন লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের হয়ে, ৩৯ গড়ে ১টি সে ুরি একটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে রান তুলেছিলেন ৫১৫। ‘তার যে সে সামর্থ্যটা আছে তাতে অবশ্য সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ নেই।’ সাব্বির রহমান নিজে আত্মবিশ্বাসী- সুযোগ পেলে প্রমাণ করবেন
সাব্বির রহমান ছিলেন বাংলাদেশ টাইগার্স ক্যাম্পে, সেখান থেকে এখন ‘বাংলাদেশ এ’ দলের হয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছেন তিনি। এই সিরিজে অংশ নেয়ার জন্য আলাদা করে উইকেটের কন্ডিশন পরিবর্তন করে ব্যাটিং ড্রিল করেছেন সাব্বির রহমান। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে এখন যারা রান করছেন তাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্ট্রাইক রেট। দেশ ছাড়ার আগে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি যখনই ব্যাটিং করি আমার চেষ্টা থাকে স্ট্রাইক রেটটা বেশি রাখার। আমার খেলার ধরনই এটা। ওয়ানডে হোক আর টি-টোয়েন্টি যেখানেই ব্যাট করি।’ তিনি নিজের পজিশন নিয়েও বলেন, ‘আমি যেখানে ব্যাট করতে নামি সেখান থেকে আসলে ১৫ বা ২০ ওভার বাকি থাকে ওয়ানডেতে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হিসেবটা সহজ হয়ে দাঁড়ায়।’ দুই হাজার ষোল সালে ঢাকায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে সাব্বির ছিলেন ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট। যেখানে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, তিলেকরতেœ দিলশান, শোয়েব মালিক, শহিদ আফ্রিদির মতো খেলোয়াড়দের মধ্যে সাব্বির হন মূল পর্বে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। চার পাঁচ বছর আগের সাব্বির ও এখনকার সাব্বিরের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পান তিনি নিজেই। এক নজরে সাব্বির রহমানের পরিসংখ্যান। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে সাব্বির রহমান ১১ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৪ গড়ে ৪৮১ রান করেছেন। ওয়ানডে খেলেছেন ৬৬টি, রান তুলেছেন ১৩৩৩, গড় ২৫.৬৩। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাব্বির ৪৪টি ম্যাচ খেলে ৯৪৬ রান তুলেছেন, প্রায় ২৫ গড়ে ব্যাট করে। সূত্র : বিবিসি