আব্দুল কুদ্দুস, গিলবার্ট চিচাম, দুলাল চন্দ্র সাহা, সেলেস্টিন রুগা, জেমস রিছিল ও রুস্তম আলীসহ আরও অনেকেই আগস্ট মাস এলেই ভালো থাকেন না। মনে ভীষণ কষ্ট নিয়ে তাদের তাড়া করে বেড়ায়। কারণ তারা মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, যারা পঙ্গু হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অনাহারে-অর্ধাহারে কোনো রকমে বেঁচে আছে, তাদের কথা কেউ ভাবেন না। কেউ তাদের এ ত্যাগের মূল্যায়নও করছে না। এই কষ্ট আর সইতে পারে না। মঙ্গলবার সকালে বীর প্রতিরোধ যোদ্ধারা এ প্রতিনিধি কে দেওয়া সাক্ষাতে এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালে সারা দেশের মতো দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকাগুলোতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ডাকে অনেকেই প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমেছিলেন। সারা দেশে কারফিউ আর সেনা তৎপরতার মুখে যখন কেউ চলাচলই করতে পারেনি, তখন এ এলাকার একদল যোদ্ধা অস্ত্র হাতে গর্জে উঠেছিল। ‘জয় বাংলা’ এ শ্লোগানে তারা কাঁপিয়ে তুলেছিলেন দেশের অন্য জনপদসহ দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো। বঙ্গবন্ধু হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে দীর্ঘ ২২ মাস বনে-বাদরে থেকে যুদ্ধ করেছেন বলে জানালেন তারা। বীর প্রতিরোধ যোদ্ধারা বলেন, কারও বছর যখন ১৪ বা ১৫ তখনই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে প্রতিরোধ যুদ্ধে গিয়েছিলেন তারা। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ডাকে তৎকালীন সময়ে দুর্গাপুর সীমান্ত এলাকায় গিলবার্ট চিচাম, দুলাল চন্দ্র সাহা, সেলেস্টিন রুগা, আব্দুল কুদ্দুস, জেমস রিছিল, রুস্তম আলী ছাড়াও আরও অনেকেই নেমেছিলেন এ যুদ্ধে। ১৯৭৬ সালের প্রথম দিকে তুমুল যুদ্ধে নিহত হয়েছেন লক্ষ্মীপুর গ্রামের ফজর আলী, গিয়াস উদ্দিন, বহেরাতলী গ্রামের আবুল কাশেম, ভবানীপুর গ্রামের ডোমেনিক চাম্ভুগং, পাইকপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিন। এ নিয়ে প্রতিরোধ যোদ্ধা কমিটির তৎকালীন অধিনায়ক আব্দুল খালেক বলেন, দুর্গাপুর উপজেলায় প্রায় ৩৭৯ যুবকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল প্রতিরোধ যোদ্ধা বাহিনী। এদের মধ্যে প্রায় ২৩জন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আর বাকিরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে নেমেছিলেন এ যুদ্ধে। সারা দেশে ৩৬ জন অধিনায়ক নিয়ে এ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সব কর্মকান্ড পরিচালনা করা হলেও দুর্গাপুর এলাকার অধিনায়ক ছিলেন ছয়জন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত চলমান ওই প্রতিরোধযুদ্ধে এ এলাকায় শাহাদাতবরণ করেন ৩৩ জন বীর প্রতিরোধ যোদ্ধা। আদিবাসী প্রতিরোধ যোদ্ধা গিলবার্ট চিচাম এ প্রতিনিধি কে বলেন, আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মতো প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন। দেশের মুক্তিযোদ্ধাগন বর্তমান সরকারের আমলে নানা সুবিধা ভোগ করছেন। আমরা চাই শুধু জাতীর জনক কে ভালোবেসে ছিলাম তার স্বীকৃতি।