মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

সবজি ও ফল চাষে কোটিপতি রাজনগরের মাহমুদ মিয়া

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরে ১৫ জাতের সবজি ও ৩০ জাতের ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক মাহমুদ মিয়া (৫০)। তিনি উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের উত্তর চাটি মেলাগড় গ্রামের মৃত মন্তাজ মিয়ার ছেলে। কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। একসময় ভিটে মাঠি কিছুই ছিল না তার। সহায় সম্বলহীন মাহমুদ মিয়া বিগত ২০০৭ সালের নিজস্ব উদ্যোগে মামা শ্বশুরের ৮ বিঘা ধানি জমি লিজ নিয়ে প্রথমে সবজি ও কলা চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম বছরই সবজি ও কলা বিক্রি করে তিনি সফলতা পান। এরপর তার আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি সবজি ও ফল চাষ করে কোটিপতি।
সরেজমিনে গিয়ে মাহমুদ মিয়া ও স্থানীয়দের সাথে আলাপে জানা যায়, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মেলাগড় গ্রামের মৃত মন্তাজ মিয়ার ছেলে ৬ সন্তানের জনক মাহমুদ মিয়া (৫০) পিতার মৃত্যুর পর একেবারে অসহায় হয়ে যান। পিতা জীবিত থাকতেই একমাত্র সম্বল বসতভিটা বিক্রি করে দেন। সব হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নেন নানা বাড়িতে। ভিটে-মাটিহীন মাহমুদ মিয়া পিতার মৃত্যুর পর কোনো উপায় না পেয়ে কিছু একটা করার চিন্তা-ভাবনা করেন। কী করবেন, না করবেন এসব চিন্তা থেকেই বিগত ২০০৭ সালের বিভিন্ন জনের নিকট থেকে এক লাখ টাকা ধার-দেনা করে পাশের উত্তর চাটি মেলাগড় গ্রামের মামা শ্বশুর জব্বার মিয়ার কাছ থেকে ৮ বিঘা ধানি জমি লিজ নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে প্রথমে সবজি ও কলা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। ধানের চেয়ে সবজি ও ফলের চাষ লাভজনক ভেবে প্রথমে কলা ও কিছু সবজি চাষের জন্য ওই জমি প্রস্তুত করেন তিনি। নিজের অধিনস্ত কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে প্রায় ৮ মাস পরিচর্যা করে ওই বছরই মোট তিন লাখ টাকার সবজি ও কলা বিক্রি করেন বলে তিনি জানান। তার শুরুটা সফল হওয়ায় পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে তিনি কাঁচকলা, পেঁপে, বড়বটি, ঝিঙ্গা, লাউ, শসা, নালিতা, পুঁইশাক, মরিচ, বেগুন, কড়লা, ঢেঁড়শসহ প্রায় ১৫ জাতের সবজি চাষ শুরু করেন। পাশাপাশি কলা, পেয়ারা, মাল্টা, লেবু, কমলা, সাতকরা, কুল, কামরাঙ্গা, বেলেম্বু, জলপাই, আম, আঁখ, জাম্বুরা, লিচু, জাম, আমলকি, কাঁঠাল, আমড়া, আনারফল, আঙ্গুরসহ প্রায় ৩০ জাতের ফলের চাষ শুরু করেন। তার খামারে প্রতিদিন পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছে। তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে মোট দুই হাজার ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয়। প্রতিদিন তার খামারের ফল ও সবজি বিক্রি করে গড়ে সাত হাজার টাকা করে মাসে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা আয় হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা করে মাসে ৯০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সকল ব্যয় শেষে তার মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে বছরে তার ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। তার খামারে দুইটি বিদেশী গরু রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই আয় থেকে মাহমুদ মিয়া মামা শ্বশুরের লিজ নেয়া ৮ বিঘা জমি, প্রতিবেশীদের নিকট থেকে আরো ৮ বিঘা জমি, নিজের বাড়ির জন্য ১৬ শতাংশ ভূমি, দুইটি সিএনজি গাড়ি ক্রয় করেন। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও তার দুই ছেলেকে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠিয়েছেন। এক ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ওই আয় থেকে।
এদিকে জানা যায়, তার এই ফলের বাগান ও সবজি খামারের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে ৩০টি মাল্টার চাড়া, ৩০টি লেচুর চাড়া, বেষ্টনীর জন্য নগদ তিন হাজার টাকা, তিন বছরে বিভিন্ন ধরনের ৯০ কেজি সার এবং একটি স্প্রে মেশিন পেয়েছেন। সবমিলিয়ে তিনি এখন রাজনগরের সফল চাষি ও কোটি টাকার স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের মালিক।
এ ব্যাপারে চাষি মাহমুদ মিয়া জানান, পিতার মৃত্যুর পর নিঃস্ব অবস্থায় কিছু একটা করার চিন্তা-ভাবনা করতে থাকি। এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে এক লাখ টাকা ধার করে মামা শ্বশুড়ের ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলা ও কিছু সবজি চাষ শুরু করি এবং ওই বছরই খরচ বাদে আমার খরচ বাদে দুই লাখ টাকা লাভ হয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নিরলস পরিশমের মাধ্যমে আজ আমার ফলের বাগান ও সবজি খামার থেকে সব খরচ বাদে বছরে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। প্রায় ১৬ বছরের পরিশ্রমে সঞ্চিত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন এসেছি। কৃষক মাহমুদ মিয়ার কথা শুনেছি। শিগগিরই সরেজমিনে তার ফল বাগান ও সবজি খামার দেখতে যাব। আমাদেও পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা অবশ্যই করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com