জাতি আজ স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্তি চায়। এজন্য দেশপ্রেমিক সকল দল ও মতের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামাীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল সমাবেশে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন। জেলা আমির মো: আনোয়ারুল হক মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও জোন পরিচালক মোবারক হোসাইন প্রমুখ। ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সকল আশা-প্রত্যাশা একমাত্র আল্লাহর নিকট সোপর্দ করতে হবে। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর যুদ্ধের ঘোষণা এসেছে। বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে জিহাদ ঘোষণার দায়িত্ব একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি জিহাদ ঘোষণা করতে পারে না। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশি বেশি আত্মসমালোচনা করতে হবে। অনেক সময় আমরা নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যূতিগুলো ভুলে গিয়ে অপরের সমালোচনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অনেক সময় আমরা সামান্য বিপদেই হতাশ হয়ে পড়ি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের তপ্ত ইতিহাস অবশ্যই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বুকে ধারণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদরের যুদ্ধে তাঁর সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে আল্লাহর দরবারে নিজেকে সোপর্দ করেছিলেন বলেই আল্লাহর সেই কাঙ্ক্ষিত সাহায্য এসেছিল। আমরা যদি সর্বোচ্চ ত্যাগ-তিতিক্ষা আল্লাহর সামনে পেশ করতে পারি, তাহলে আশা করা যায়, আমরাও আল্লাহর সাহায্য পাব, ইনশাআল্লাহ। হামলা-মামলা, গ্রেফতার, হয়রানি যা কিছুই আসুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই ধৈর্য হারা হওয়া যাবে না। আল্লাহর উপর সবর-এখতিয়ার করে সীসাঢালা প্রচীরের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে সকল বিপদাপদের মোকাবিলা করতে হবে। এতে যদি জীবনও দিতে হয়, তবুও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে বিচ্যূত হবার কোনো সুযোগ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের নেই।’ তিনি বলেন, বালা-মুসিবদসহ সকল অবস্থায় জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের সকল অভাব পূরণ করতে না পারলেও তাদের সব দুঃখ-কষ্টের ভাগী হতে চায়। কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা এলে তা পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে সংঘঠনের সকলকে। নির্বাচন বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। নির্বাচনের সেই পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব সরকারের। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি আমাদের আছে। নির্বাচনী জোটের বিষয়ে তিনি বলেন, অবস্থা এবং প্রেক্ষাপট দেখে জামায়াত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ২৪ আগস্ট এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইলেট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটে এই যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিল। প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ইভিএম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও বলেছিলেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না।’ দেশবাসী মনে করেন, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের প্রতি কোনো তোয়াক্কা না করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমরা সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের এই একপেশে সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, মূলত জালিয়াতির উদ্দেশ্যেই ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত যত জায়গায় ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সব জায়গায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এমনকি বিশ্বের অনেক দেশও ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নিবাচনসহ আরো অনেক জায়গায় ইভিএম ঠিকমতো কাজ না করায় ভোট গ্রহণে বিপত্তি দেখা দিয়েছিল। দেশের বোদ্ধা মহল এবং প্রধান প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএমকে ‘জালিয়াতির বাক্স’ বা ‘কারচুপির যন্ত্র’ হিসেবে অভিযোগ করেছে। ইভিএমের উপর দেশের জনগণের কোনো আস্থা নেই। সরকার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অতীতের মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাঁয়তারা করছে। তারা আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ‘কারচুপির যন্ত্র’ ইভিএম-এর মাধ্যমে প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে যে কোনো মূল্যে আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। তাদের এ দুরভিসন্ধি দেশের জনগণ কোনোভাবেই বাস্তবায়ন হতে দিবে না। তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত ও জালিয়াতির বাক্স’ হিসেবে খ্যাত ইভিএম ব্যবহার বন্ধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার বা দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” প্রেস বিজ্ঞপ্তি