সরকার বিরোধী লাইভ অনুষ্ঠান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত রবিবার (২৮ আগস্ট) আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর নিউমার্কেট থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষ। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৯ সেপ্টম্বর দিন ধার্য রয়েছে বলে জানা গেছে। এরআগে, গত শনিবার রাতে খাদিজাতুল কুবরাকে মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর নিউমার্কেট থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন উপপরিদর্শক খাইরুল ইসলাম। এ মামলার আরেক আসামি হলেন- মেজর (অব) দেলোয়ার হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ ধিং ষরাব’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় মেজর দেলোয়ার হোসেন (অব:) তার বক্তব্যে বাংলাদেশ বৈধ গনতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।
মেজর দেলোয়ার তার বক্তব্যে বলেন, ‘ধর্ষণের বিচার চেয়ে লাভ নাই, বাংলাদেশে কোন পুলিশ বাহিনী নাই, যা আছে তারা ভারতীয় দালাল এবং তাদের কাজ হলো ভারতীয় তাবেদার সরকারকে রক্ষা করা। আমরা শীঘ্রই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন দেশপ্রেমিক সরকার আনব। আর মাত্র এক মাস সময় আছে সামনে। ৭ ই নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের দিনই এই তাবেদার সরকারের পতন ঘটানো হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের ভয় হলো ক্ষমতা হারানো। আর এ কারণেই তারা টাকা পয়সা দিয়ে দালাল শ্রেনীর লোকজনকে হাত করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। দেশের এই বিশৃঙ্খল অবস্থানের সামরিক পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করে গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে।’
এছাড়া আরো উল্লেখ করা হয়, সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর দেলোয়ার তাদের ইউটিউব চ্যানেল ও ব্যক্তিগত ফেইসবুক পেইজ গুলোতে উল্লিখিত ভিডিওগুলো আপলোড করে বাংলাদেশে চলমান স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা তাদের মিথ্যা তথ্যপূর্ণ আলোচনা ইউটিউব, ফেইসবুকে প্রচার করে বাংলাদেশের সাধারণ জনগনকে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে তাদেরকে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া তারা উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে সরকার বিরোধী মনোভাব তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে ও বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুনভাবে ক্ষুন্ন করছে। তাই আসামিরা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারার আপনার করেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এরপর মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ১৬ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাজহারুল ইসলাম। আদালত এ চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী করেন।সঞ্চালক গ্রেপ্তার হলেও মেজর দেলোয়ার এখনো পলাতক রয়েছেন।