ঠাকুরগাঁওয়ে গর্ত আতঙ্কে পড়েছে হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীটা। স্কুলের নতুন ভবনের জন্য খোড়া হয়েছে গর্ত। সেখানে জমেছে পানি। শিক্ষক-অভিভাবকদের শঙ্কা সেখানে যেকোনও সময় শিশু শিক্ষার্থীরা পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে চললেও ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হয়। কিন্তু প্রায় ১০ বছরেও বিদ্যালয়টির অবকাঠামোর কোনো পরিবর্তন আসেনি। শুরু থেকে একটি জরাজীর্ণ বাঁশের বেড়ার টিন শেড ঘরে নিয়মিত ক্লাস ও অফিসে যাবতীয় কার্যাদি পরিচালিত হয়ে এলেও চলতি অর্থবছরের জুনে একটি ভবন নির্মাণ বাবদ ১ কোটি একলক্ষ পাঁচ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ পায় স্কুলটি। ভবন নির্মাণের কাজটি পান ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদার নুর ইসলাম। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিসহ ৬টি শ্রেণিতে ৯৯ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক রয়েছেন। দশবছর পর হলেও হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ কোটি একলক্ষ পাঁচ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে শ্রেনীকক্ষের জন্য ভবন নির্মান কাজ শুরু করা হয় ১৮ আগষ্ট শুক্রবার ছুটির দিন। ঠিকাদারের লোকজন বিদ্যালয়ের মাঠে গর্ত খুঁড়ে ভবন নির্মাণের জন্য।
গর্তটি শ্রেণীকক্ষের দরজা ঘেঁষে এমন ভাবে খোড়া হয়েছে যে, অসাবধানতা বসত শ্রেণীকক্ষের ঢুকতে গেলেই পড়তে হবে গর্তে। পরদিন স্কুল খোলার পরে শিক্ষককেরা বিদ্যালয়ে এসে খেলার মাঠে বিশাল গর্ত দেখতে পেয়ে আতংকিত হয়ে পড়েন। অপরদিকে শ্রেণী কক্ষের সামনেই গর্ত খোড়ার সংবাদ জানাজানি হলে অভিভাবকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে আতংক। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের দুর্বিষহ ভোগান্তির কথা। আতঙ্কে ঠিকমত পাঠ গ্রহন করতে পারছে না তারা। চরম দুর্ভোগের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, একদিকে ভবন নেই, বিশুদ্ধ পানির সংকট, টয়লেট বাথরুমের সংকট। পাশাপাশি খেলার মাঠও পরিণত হয়েছে পুকুরে। মাঠে ভবন নির্মাণের জন্য খোড়া গর্ত ফেলে রেখায় প্রাণশঙ্কাতেও পড়েছে তারা। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জনি আক্তার বলে, স্কুলে আগে খেলতাম এখন খেলতে পারিনা মাঠে পুকুর খোড়া হয়েছে তাই। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী পাপড়ি আকতার বলে, টিনের ছোট ঘরে গরমের সময় তাদের খুব কষ্ট হয়। আবার ঝড়–বৃষ্টি হলে টিন দিয়ে পানি পড়ে। এতে অনেক সময় ভিজতে হয়। বই–খাতা নষ্ট হয়ে যায়। এভাবেই তারা পড়াশোনা করেন। এখন আবার ঝুকিপূর্ন গর্ত করে ফেলা রাখার কারণে বিদ্যালয়ে আসতেই ভয় লাগে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিয়া বেগম বলে, আমাদের স্কুলে কোনো কিছুই নেই। অন্য স্কুলে নতুন পাকা ঘর, সেখানে বসার নতুন বেঞ্চ, খেলার কত জিনিস, শুনলেই মনটা খারাপ লাগে। আগে তবু খেলার মাঠ ছিলো এখন সেটাও নেই। এ অবস্থায় সরজমিন ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে, তাই গর্ত খোঁড়া হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে গর্ত ভরে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণীকক্ষে ঢুকছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপি আক্তার বলেন, সবসময় একটা আতংক কাজ করে। যখন ছুটি দিয়ে দেই তখন শিক্ষকদের গর্তের পাশে দাড়িয়ে থাকতে হয়। যাতে বাচ্চারা পুকুরে পড়ে না যায়।
অভিভাবকদের প্রশ্ন আছেই, কখন জানি বাচ্চারা পানি ভর্তি গর্তে পড়ে যায়। ছোট বাচ্চা যেগুলো প্রাক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে তাদের স্কুলে আসা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রধান শিক্ষিক মোকছেদুর রহমান (মুকুল) জানান, নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু করলে এতদিনে হয়তো ভবনের নিচতলা নির্মাণ অনেকটাই হয়ে যেতে পারতো। শুধুশুধু গর্ত খুঁড়ে ফেলে রেখে গেছে। ওই গর্তে পানি ভর্তি হয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। অপরদিকে গর্তের পাশের মাটি অনবরত পানিতে ধসে পড়ছে। বর্ষা মৌসুম চলছে আরো বৃষ্টি হবে। গর্তের ভাঙনে শ্রেণীকক্ষসহ অফিস তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। বেশিরভাগ অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানিয়েছি। বিদ্যালয়ের সভাপতি হেলালুর রহমান বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের কাজ গর্ত খোঁড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ঠিকাদার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেও কোন সুরাহা মেলেনি। অতি দ্রুত একটা ব্যবস্থা করা না হলে ঝুকি হয়ে দাঁড়াবে শিক্ষার্থীদের জন্য। যে কোন মুহুর্তে কোমলমতি শিশুদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুনা লায়লা নয়া দিগন্তকে বলেন, ঠিকাদারের যাচ্ছেতাই কার্যকলাপের জন্য স্কুলে শিক্ষার্থী কমে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে অবগত করা হয়েছে। ঠিকাদার নুরু ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের কাজ উদ্বোধনের দিন ভবন নির্মাণের জন্য গর্ত খোড়া হয়। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে ভর্তি হয়ে যায় গর্তটি। তাই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।