দ্বিতীয় জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জামালপুরে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের আট নেতা। আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী বা বামদলগুলোর তেমন কোনো আলোচনা চোখে পড়েনি।আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউ কেউ ইতোমধ্যেই ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন এবং ভোট প্রার্থনা করতে শুরু করেছেন। অনেকেই মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন ভোটারদের সঙ্গে।এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী আট নেতা হচ্ছেন-জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমান উল্লাহ আকাশ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ হোসেন তরফদার ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মীর শরীফ হাসান লেনিন।এর বাইরে আওয়ামী লীগের আরও দু-একজন নেতা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এছাড়া জেলা পরিষদের সাত সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত তিন নারী সদস্য পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে নেমেছেন। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার সভাপতি ছিলেন। জেলা পরিষদসম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী গতবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে ভোট করে জয়ী হয়েছিলেন। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এইচ আর জাহিদ আনোয়ারকে পরাজিত করেছিলেন।ফারুক বলেন, “দলীয়ভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন হলে দলের প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহকে সমর্থন দিব আর ‘উন্মুক্ত নির্বাচন’ অনুষ্ঠিত হলে নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। গতবার মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। পরে নেতা-কর্মীদের চাপে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছি। এবারও দলের মনোনয়ন চাইব। আশা করি, এবার দল আমাকে বিমুখ করবে না। ”জেলার ছোট বড় সবার কাছে ‘মনি ভাই’ হিসেবে সুপরিচিত মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি একাধিকবার জামালপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন। বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, “জীবনের শেষ সময়ে এসে জেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছি। আশা করি, দল আমাকে সেই সম্মান দেবে।”জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদ আনোয়ার গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর কাছে হেরে যান তিনি।জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ কতিপয় নেতৃবৃন্দ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে তাকে পরাজিত করান বলে অভিযোগকরে জাহিদ বলেন, “বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে যত টাকা ব্যয় করেছেন তত টাকা আমি কোনোদিন দেখিওনি। ”এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় মনোনয়ন তাকেই দেওয়া হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, “তার পরেও দল যা সিদ্ধান্ত দেবে, তা-ই হবে।”জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানাও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবারের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ আকাশও। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মাথা পেতে নেবেন বলে জানান তিনি।দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ হোসেন তরফদার।এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা মীর শরীফ হাসান লেনিন সংরক্ষিত আসনের এমপি হোসনে আরার ছেলে। তার বাবা মুক্তিযুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার মীর সফিকুর রহমান ছিলেন ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।মীর শরীফ হাসান লেনিন বলেন, “দলীয় মনোনয়ন চাইব। আশা করি দলীয় মনোনয়ন আমাকেই দেওয়া হবে।”এদিকে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন।তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা অংশ নিব না।”আর জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাকির হোসেন খান বলছেন, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর জেলা জাতীয় পার্টির সভা আছে। ওই সভায় জেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে।গত ২৩ অগাস্ট নির্বাচন কমিশন তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১ জেলা পরিষদে ভোটের তফসিল ঘোষণা করে। জামালপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৯৯৮। তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর।