বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ছে। গতকাল রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আনিসুল হক জানান, বর্ধিত মেয়াদে খালেদা জিয়া ঢাকার নিজ বাসায় থেকে তার চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময়ে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না- আগের মতো এই দুটি শর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানোর বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর এখন এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ছে। খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।
কয়েক দিন আগে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। এর পাঁচদিন পর ২৮ আগস্ট ফের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের নানা প্রক্রিয়া শেষ করে তিনি ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন।
দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ-ের আদেশ দেন। ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়ার শেষ হয়ে এলে ওই বছরের ২৫ আগস্ট বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আবেদনও করে পরিবার। কিন্তু সরকার সেই প্রস্তাব আমলে না নিয়ে আরও তিনদফা মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়, যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর।