তুমব্রুর পর এবার উখিয়া সীমান্তে গোলাগুলি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কোনারপাড়া নো মেনস ল্যান্ডে (শূন্যরেখা) মিয়ানমার বাহিনীর মর্টারশেল ও গোলাবর্ষণের ঘটনায় চরম আতঙ্ক এবং নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছেন তারা। মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় এক কিশোর নিহতের ঘটনার তিন দিনের মাথায় সোমবার তুমব্রু সীমান্তের কোণাপাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিটি মেইল যোগে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যকে নিশ্চিত করেছেন শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্দার দিল মোহাম্মদ। রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, আমরা চিঠিতে জাতিসংঘকে জানিয়েছি, সামরিক জান্তা বাহিনী যেকোনো মুহূর্তে আমাদের ওপর আরও বড় আক্রমণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতিসংঘকে শূন্যরেখার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমান সীমান্তে নতুন করে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আঞ্জুমান পাড়ার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা গোলাগুলির শব্দ পান। পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী জানান, বান্দরবানের তুমব্রুর পর এবার আঞ্জুমান পাড়ার সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে তারা যাতে ভয়ে না থাকেন, সেজন্য বোঝানো হচ্ছে। বিষয়টি সীমান্ত বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, ‘সকালে উখিয়া সীমান্তে গোলাগুলি শব্দ পাওয়ার বিষয়টি স্থানীয়রা অবহিত করেছেন। এখানে সীমান্তের ৩০০ মিটারের ভেতরে প্রায় ১০০ পরিবার রয়েছে। আমরা তাদের খোঁজ-খবর রাখছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এদিকে সকাল ৮টা থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে আবারও গোলাগুলি চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সীমান্ত এলাকায় প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরেই গোলাগুলি চলছে। এর ফলে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দার চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন। এ ঘটনায় সীমান্তের ৩০০ পরিবারকে অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল ও গোলার আঘাতে শূন্যরেখার একজন রোহিঙ্গা নিহতসহ ছয় জন আহত হয়েছেন। এর আগে মর্টারশেল ও গোলার ঘটনায় ঢাকাস্থ মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চার বার তলব করা হয় এবং এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপরও গোলাগুলি বন্ধ হয়নি। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘আজকেও সীমান্তে গোলাগুলি শব্দ পাওয়া গেছে। মাঝে মধ্যে মার্টারশেলের শব্দ এপারের স্থলভূমি কেঁপে ওঠে। মনে হচ্ছে মর্টারশেল এখানে পড়ছে। এমন অবস্থায় সীমান্তের বসবাসকারীরা ভয়ভীতির মধ্য রয়েছেন।’
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি:
মিয়ানমারের জনগণ তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিদের আলোচনার টেবিলে রাখার অধিকার রাখে বলে উল্লেখ করেছেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইউরোপ এবং এশিয়ার আইন প্রণেতারা। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ, ইউরোপ ও এশিয়ার সংসদ সদস্য এবং মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সদস্যরা গত বছরের অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবিলায় আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ নিউইয়র্কে চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের বাইরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসঙ্ঘের মালয়েশিয়ার স্থায়ী মিশন মিয়ানমারের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি বৈঠকের আয়োজন করেন।
আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এনইউজি এবং এনইউসিসিসহ মিয়ানমারের সমস্ত অংশীজনদের সাথে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায্য পরামর্শ হওয়া উচিত। তারপরে একটি পরিষ্কার পরিসমাপ্তিসহ একটি কাঠামো থাকা উচিত, যার মধ্যে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
আবদুল্লাহ হলেন একমাত্র আসিয়ান মন্ত্রী যিনি মিয়ানমারের বৈধ সরকার এনইউজি-এর সদস্যদের সাথে প্রকাশ্যে সাক্ষাৎ করেছেন, যা দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্ক থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান হয়েছে। সভায় মানবাধিকার বিষয়ক এনইউজি মন্ত্রী অং মিও মিন, এনইউজি’র যোগাযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী, সেইসাথে এর মুখপাত্র হতিন লিন অং, জাতিসঙ্ঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াও মো তুন এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। হতিন লিন অং বলেছেন, ‘মিয়ানমারের জনগণ তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিদের সেই টেবিলে থাকার যোগ্য যেখানে আঞ্চলিক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।’ বৈঠকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মিয়ানমারের সঙ্কটের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইনকোয়ারি (আইপিআই)-এর সভাপতি হেইডি হাউতালা, চার্লস সান্তিয়াগো, মালয়েশিয়ার এমপি এবং মানবাধিকার বিষয়ক আসিয়ান সংসদ সদস্যদের চেয়ারম্যান, মার্সি ক্রিস্টি ব্যারেন্ডস, ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য, টম ভিলারিন, ফিলিপাইনের সাবেক কংগ্রেসম্যান উপস্থিত ছিলেন। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার একটি গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়েছে। কারণ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং এর নেতৃত্বে সামরিক জান্তা তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে তার জনসংখ্যার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।