মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন

গ্যাস সংকট কাটাতে ভরসা এখন কাতার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিদ্যমান চুক্তির আওতায় কাতার থেকে অতিরিক্ত ১০ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ পেতে দ্বিতীয় দফায় কাতার সফর করেছে জ্বালানি বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল। মূলত কাতার থেকে এলএনজি আমদানি বাড়ানো যায় কিনা সেটিই ছিল এ সফরের লক্ষ্য। তবে এলএনজির বৈশ্বিক তীব্র চাহিদার মুখে বাংলাদেশকে জ্বালানি পণ্যটির বাড়তি সরবরাহ দেয়ার বিষয়ে জোরালো আশ্বাস দিতে পারেনি দেশটি। যদিও জ্বালানি বিভাগ বলছে, কাতারের কাছ থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গিয়েছে।
জ্বালানি বিভাগসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় গ্রিডে স্পট এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কমে গিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে বাড়তি গ্যাস পেতে কাতারের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। তবে অতিরিক্ত গ্যাস শিগগিরই দেয়া হবে কিনা তা নিশ্চিত করেনি জ্বালানি বিভাগের সূত্রটি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, কাতারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ইতিবাচক কিছু বিষয় উঠে এসেছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে দ্রুতই এ বিষয়ে আরো অগ্রগতি পাওয়া যাবে কাতারের কাছ থেকে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তির (এসপিএ) আওতায় কাতার থেকে বার্ষিক ১৮-২৫ লাখ টন এলএনজি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিদ্যমান সরবরাহের বাইরে অতিরিক্ত এক মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানির প্রস্তাব চলতি বছরের মার্চে একবার দিয়েছিল বাংলাদেশের জ্বালানি বিভাগ। সেই সময়ে বাংলাদেশের গ্যাস সংকটের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছিল কাতার। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্যাস সরবরাহ ও সংকটের হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে দ্বিতীয় দফায় কাতারের কাছে চুক্তির আওতায় বাড়তি এলএনজি সরবরাজের প্রস্তাব দেয়া হয়। পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, গ্যাস সংকটের বিষয়টি জানিয়ে কাতারকে দ্বিতীয় দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে চুক্তির আওতায় এক মিলিয়ন টন থেকে সামান্য কিছু গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। তবে সেটিও আলোচনার পর্যায়ে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসানসহ একটি প্রতিনিধি দল কাতার সফর করে। এ সফরের মূল লক্ষ্যই ছিল কাতার থেকে গ্যাস আমদানি। একই সঙ্গে দেশটি থেকে গ্যাস পেতে কাতারের এলএনজির সার্বিক বিষয়টি পর্যালোচনা করা। এর আগে, প্রথম দফায় কাতার থেকে বাড়তি এলএনজি সরবরাহের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, তার বিপরীতে কাতারের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের আগে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত এলএনজি সরবরাহ দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য কাতারের সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৭ সালে হওয়া এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০৩২ সালে। কাতারের রাশ লাফান লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে এ চুক্তি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এ চুক্তির আওতায় গত পাঁচ বছরে কাতার থেকে ১৪৭টি এলএনজিবাহী কার্গো দেশে এসেছে।
এলএনজি আমদানি কার্যক্রমে যুক্ত থাকা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরেও দেশটির ৪০ কার্গো সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২২টি কার্গো সরবরাহ করেছে কাতার। মহামারীর অভিঘাত-পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদার কারণে গত বছরের শেষার্ধে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বাড়তে থাকে। স্পট মার্কেট থেকে জ্বালানি পণ্যটি আমদানিতে পেট্রোবাংলার ব্যয় হয় প্রতি এমএমবিটিইউ ৩৫ ডলার ৮৯ সেন্ট করে। পরবর্তী সময়ে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৫৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা দেখা যায়। গ্যাসের দামও ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৮০ ডলারের ওপর উঠে যায়। বর্তমানে স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৪০ ডলারে ওঠানামা করছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, বৈশ্বিক যে উত্তেজনা চলছে, তাতে আমদানিনির্ভর দেশগুলোর কাছে গিয়ে খুব বেশি সুবিধা করা যাবে না। কারণ কাতার বিশ্বব্যাপী এলএনজি সরবরাহকারী বড় দেশ। তাদের গ্যাসের প্রতি ইউরোপের প্রত্যেক দেশের চোখ। তারা বিপুল অর্থ নিয়ে কাতারের দ্বারস্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় বাড়তি এলএনজি চেয়ে খুব বেশি সুবিধা করা যাবে না। এদিকে স্পট এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় তার ব্যাপক প্রভাব দেখা যাচ্ছে স্থানীয় শিল্প খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে। শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংকটের কারণে ৪০-৫০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবাসিকে দিনে ও রাতের বড় একটি সময়ে গ্যাস থাকছে না। এ পরিস্থিতি কতদিন চলবে তারও কোনো সমাধান নেই গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা তিতাসের কাছে। পেট্রোবাংলাও স্থানীয় উৎসের পাশাপাশি চেষ্টা চালিয়ে কূলকিনারা করতে পারছে না। দেশে দৈনিক ৪৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। এ চাহিদার মধ্যে পেট্রোবাংলা সরবরাহ করতে পারছে ২৮০ কোটি ঘনফুট। প্রতিদিন গ্যাসের ঘাটতি থাকছে ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের। রেশনিং করেও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না সংস্থাটি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com