পঞ্চগড়ে নৌকাডুবির মর্মান্তিক ঘটনার তৃতীয় দিনে
করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে লাশের সংখ্যা বেড়ে ৬৮, এখনো নিখোঁজ ৫
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় তৃতীয় দিনে আরও ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ জনে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে হতে বিকাল পযর্ন্ত দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন নদী থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিকে জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায়। তিনি বলেন, এখন পযর্ন্ত ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে নৌকায় বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রায় শতাধিক মানুষ। নৌকাটি ছাড়ার শুরুতেই দুলতে থাকে। এক পর্যায়ে দুলতে দুলতে মাঝ নদীতে গিয়ে ডুবে যায় নৌকাটি। গত রবিবার ও সোমবার মোট ৫১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তৃতীয় দিনের মত উদ্ধার কার্যক্রমে গতকাল মঙ্গলবার সকাল হতে বিকাল পর্যন্ত উদ্ধারকৃত নিহতদের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন-চৈলবালা(৫০) সনেকা রানী (৫৫), হরিকিশোর (৪৫), শিল্টু বর্মন (৩২), মহেন চন্দ্র (৩০), রুপালী রানী (২৫), আঁখি রানী (১৫), সুমি রানী (৩৮), পলাশ চন্দ্র বর্মন(১৭), ধৃতি রানী দাস(১০) সজিব রায়(১০), পবিতা রানী (৩০), জোসনা রানী (৩২), মনিভুষণ (৪৬), দোলা রানী (৫), মনিকা রানী (৩৮), মহিন্দ্রনাথ (৫৬)। মৃতদের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৪ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর ২জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড়ের ১ রয়েছেন। ৬৭ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন এবং পুরুষ ১৭ জন। বাকি ২১টি শিশু রয়েছে।
১১ লাশ উদ্ধার করেছেন সারোয়ার
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি মরদেহ উদ্ধারে স্থানীয়রাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তেমনই একজন সারোয়ার হোসেন। তিনি নিজ হাতে ১১টি লাশ উদ্ধার করেছেন। সারোয়ার হোসেন উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের পাকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। নিজের কথা না ভেবে স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি মরদেহ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন। সারোয়ার হোসেন বলেন, নৌকাডুবির ঘটনাটি খুবই ভয়াবহ। নৌকা ডুবে যাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান নিয়ে আমি খুব হতাশ ছিলাম। সে জন্য নিজ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করে আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে লাশ উদ্ধার করা শুরু করি। আমি নিজ হাতে ১১টি লাশ উদ্ধার করেছি। আমার কাছে মানুষ মানে হলো মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এখানে ধর্ম-বর্ণ কোনো বাধা না। মানুষের জন্য কিছু করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
রেলপথমন্ত্রীর আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে নিহত পরিবারগুলোর প্রত্যেকের জন্য গতকাল মঙ্গলবার পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথমন্ত্রী এ্যাডঃ নুরুল ইসলাম সুজন আর্থিক অনুদানের ২৫ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন। এদিকে তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নৌকা ডুবিতে নিহত ফাল্গুনী রানী ও ব্রজেন্দ্রাথ এর বাড়িতে গিয়ে আর্থিক অনুদানের চেক পরিবাবের সদস্যদের মাঝে তুলে দেন। পরে রেলপথমন্ত্রী উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে জেলা প্রশাসন কর্তৃক জরুরী তথ্য সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। জেলা আওয়ামী লীগের ৩ দিনের শোক : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে গত তিন দিনে ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাজেডিক এই ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগ হতে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হতে বৃহস্পতিবার ৩ দিন এই শোক পালন করা হবে। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এই শোক পালনের বিষয়টি ন্শিচত করেছেন।