সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী গতকাল মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর)। এদিন রাজধানীসহ সারাদেশের মণ্ডপগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে যজ্ঞাদিও। গত শনিবার ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে যে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়, তা আজ বুধবার প্রতীমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ফলে দুর্গোৎসব শেষ হয়ে বিদায়ের সুর দেখা গেছে মণ্ডপে মণ্ডপে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, গত সোমবার মহাঅষ্টমীর বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘কুমারী পূজা’। এছাড়া অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে পালন করা হয় ‘সন্ধি পূজা’। গতকাল মঙ্গলবার যজ্ঞ আর নবমী পূজার মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ। দুর্গতি নাশিনী মহিষাসুর মর্দিনীর আরাধণা এবং আরেকটি দিবানিশি শেষ হলে কৈলাশে স্বামীগৃহে ফিরবেন মা দুর্গা। এর পাশাপাশি ধর্মী রীতি-প্রথা অনুযায়ী অন্যান্য আয়োজন তো রয়েছেই। পরের বিজয়া দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।
এদিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মণ্ডপগুলোতে সকাল থেকে মানুষের আনাগোনা দেখা যায়, যা বিকালের দিকে ভিড়ে পরিণত হয়। বিশেষ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তারা নতুন পোশাকে পরিবারের সঙ্গে এসেছে। বাসায় ফেরার সময় ম-পগুলোর বাইরে অস্থায়ীভাবে বসা দোকানপাট থেকে বাহারি সব খাবারসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসা অমিতাভ সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসায় এবার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মণ্ডপে এসেছি। এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে সবাই খুশি। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম পুরো একটি বছর। সবার মনে আশা পূরণ হোক, সেটাই চাওয়া আমাদের।
এই উৎসবকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সন্তুষ্টি জানিয়ে একজন সনাতন ধর্মী নেতা বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান এবং রাজনৈতিক নেতারা দুর্গোৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। গেলোবারের মতো এবারও নানা শঙ্কার কথা বলা হয়েছিল। সেরকম কিছু না ঘটায় নতুন মাত্রা পেয়েছে দুর্গোৎসব।
আয়োজকরা বলছেন, দুর্গোৎসবে করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে আবারও অনুসারীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে মন্দির-মণ্ডপগুলো। এই উৎসবকে ঘিরে সনাতন ধর্মের মানুষের মাঝে সীমাহীন আনন্দ কাজ করে। সন্তানদের মাঝেও ধর্মীয় মূল্যবোধের সৃষ্টি হয়। দেবী মার কাছে প্রার্থনা করেন তারা। দেশ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার সুখ ও সমৃদ্ধি কমনা করা হয়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসব হচ্ছে। আজ মহানবমীর দিনসহ পূজার চারদিন অতিবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোথাও এখনও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা আন্দন্দমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছি। আগামীকাল বুধবার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আয়োজনের ইতি ঘটবে। সে কারণে শেষ সময়ে মণ্ডপগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই বিদায়ের সুর লক্ষ করা যাচ্ছে। এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। এরমধ্যে রাজধানীতে ২৪২টি ম-প রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মন্দির, ধানমন্ডি পূজামণ্ডপ ও বনানী সর্বজনীন পূজাম-পকে বিশেষ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। ঢাকার বৃহত্তর মন্দির হলো সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, উত্তরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ, বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের পূজামণ্ডপ। এছাড়া ২ তারকা চিহ্নিত ৮৬টি পূজামণ্ডপ, এক তারকাবিশিষ্ট ৭৭টি এবং সাধারণ শ্রেণির ৬১টি পূজামণ্ডপ রয়েছে।