মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ছবির মত সাজানো স্বপ্নের গ্রামে, প্লাবিত জমিতে মাছের খেলা

আবু কোরাইশ আপেল কুমিল্লা উত্তর
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে যখন কুমিল্লার দাউদকান্দির বেকিনগর পৌছাই তখন সবেমাত্র ভোরের নরম সোনামাখা সদ্য প্রস্পটিত প্রথম আলো,প্লাবন ভূমিতে খেলায় মত্ত জল-জাল-জেলেদের সাথে। ছবির মত সাঝানো গ্রামে প্লাবন ভূমিতে মাছের খেলা যেন,জল-জালের অনবদ্য এক অনুকাব্য। যে কাব্যে আছে গাছ-গাছালির সুনিবিড় ছায়া, কোলাহলহীন প্রকৃতির মাঝে শুধু পাখিদের গুঞ্জন, দিগন্ত প্রসারিত বিছানো সবুজ কারুকাজ, আজ ডুবে থাকা নিমগ্ন জলে চলছে রুপালী বিল্পবের সাফল্য গাঁথা। প্রকৃতির সব রং ঢেলে দিয়ে এখানে- আজ তৈরী করেছে,হৃদয় ছোঁয়া, জল-রংয়ের ভূবন মোহনী ক্যানভাস। ছয়মাস সোনাফলা ধান আর একই জায়গায় বাকী ছয়মাস রুপালী মাছের চাষ। বাংলার সৌন্দর্যেভরা শীতল গ্রামের ঐক্যবদ্ধ মানুষের প্লাবন ভূমিতে সমাজবদ্ধ হয়ে, মাছ চাষের অপরুপ বিমুগ্ধ রুপায়ন এখন এই জনপদে। ভোরের সূর্য প্লাবনের জলে উঁকি দিতেই, ঘুমন্ত জনপদ আড়ঁমোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠে। রুপালী মাছ,চাষীদের চোখে রঙ্গিন ঝিলিক,কর্মব্যস্ত মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য,ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাক, সব মিলে যেন তৈরী করেছে আলাদা এক মোহনীয় ব্যঞ্জন। এ যেন ভাত-মাছের ১৬ আনাই বাঙ্গালীয়ানা।
যে জমি দেয় ভাত, সে জমিই আবার হয়ে উঠে অফুরন্ত মাছের ভান্ডার। ইতিমধ্যেই দাউদকান্দি মডেল’ নামে খ্যাত প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ সারাদেশেই হচ্ছে জনপ্রিয়। দাউদকান্দি উপজেলায় বাৎসরিক মাছের চাহিদা ৬ হাজার ৯শত ৮৭ মেট্রিক টন। বিপরীতে গত বছর উৎপাদন হয় ৪৫ হাজার ৩শত ৫৯ মেট্রিকটন। এর মধ্যে প্লাবন ভূমির জমি থেকে মাছ পাওয়া যায় প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। যা স্থানীয় চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ৩শত ৭২ মেট্রিক টন বেশি। তিন দশক আগে এখানকার ধানুয়াখোলা গ্রামের সুনীল বাবু যে স্বপ্নের বীজ রোপন করেছিলেন। আজ সেই বীজ, ডাল-পালা ছড়িয়ে মহীরুহ হয়ে উঠেছে। যেখানে চিত্রায়ণ হচ্ছে প্লাবন ভূমিতে মাছ উৎপাদনে, দেশ সেরা ১১৬টি জলাশয়ে, মাছ আর জালের শৈল্পিক মহাকাব্য। সেই কাব্যের একটি গুরুত্বপূর্ন চরিত্র, রঙ্গিন স্বপ্ন ছড়িয়ে দেওয়া গ্রামীন জনপদের অন্যতম সফল মৎস্য চাষী আলী আহম্মেদ মিয়াজী। তিন হাজার ছয়শত বিঘা জমিতে যার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে স্বপ্নের জাল। আটটি মৎস্য প্রকল্পের ব্যবস্থপনা পরিচালক তিনি। নম্র-বিণয়ী, আলী আহম্মদের সাথে কাজের ফাঁকেই জমে উঠে আড্ডা। নরম স্বভাবের মানুষ, আলী আহম্মেদ পড়াশোনায় মাধ্যমিক গন্ডি পেরিয়েই জড়িয়ে পড়েন,প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষে। মাঝে উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি জমান প্রবাসে। কিন্ত যার সখ্যতা জল আর জালের সাথে,সে তো আর বিদেশ-ভূঁইয়ে থিতু হতে পারেন না। বছর তিনেক পর দেশে ফিরেই আবার শুরু হয় তার জল-জাল নিয়ে লেখা পান্ডুলিপির নাট্যরুপ। সরাসরি চারশত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে তার আটটি প্রকল্পে, ঠোঁটের কোনে মৃদ? হাসি ঝুলিয়ে পরিতৃপ্তির সাথে বললেন আলী আহম্মেদ মিয়াজী। উপজেলা-জেলায় সেরা- সরকারীভাবে পুরুষ্কারপ্রাপ্ত মৎস্য উদ্যোত্তা, জাতীয়ভাবে মাছ উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পেরে গর্বিত মনে করেন তিনি নিজেকে। ১১৬ টি মৎস্য প্রকল্পে লক্ষাধিক মানুষের সরাসরি হয়েছে কর্মসংস্থান এবং এ অঞ্চলের লাখ-লাখ মানুষ নানাভাবেই হচ্ছেন যার সুফলভোগী যোগ করেন আলী আহম্মদ মিয়াজী। প্রায় দেড়শত গ্রামে লক্ষাধিক মানুষের সচ্চল হওয়ার গল্পে যতই চোখ কপালে উঠুক, প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষে ব্যস্ত জনপদে অনেকাংশেই কমে এসেছে বেকারত্ব। নেই মাদকসেবীদের উপদ্রব।আয়-রোজগারে ব্যস্ত মানুষের প্রযোজন হয় না চুরি-চিনতাইয়ের মত সমাজ বিরোধী কাজে জড়িয়ে পরার। সামাজিকভাবে মাছ চাষ, সমাজে কমিয়ে এনেছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। সুদৃঢ় হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টুনী। গ্রামের জলাশয়ের কোল ঘেঁষা দোকানে, চা- পানের ফাঁকে কথা হয় মাছের পাইকারী ক্রেতা সেলিম মিয়ার সাথে,তিনি জানান,এখানকার বিভিন্ন প্লাবন ভূমি থেকে বিভিন্ন সময় মাছ ধরা হয়। তিনি সেখান থেকে মাছ কিনে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। তার মত প্রচুর পাইকারী ও খুচরা ক্রেতার ভীড় দেখা যায়, সকালের প্লাবন ভূমির প্রকল্প এলাকায়। পাইকাররা মাছ ভর্তি গাড়ি নিয়ে পাড়ি দেয় দূরের কোনো ক্রেতার জন্য। গ্রামের বাসিন্দা মাদ্রাসা শিক্ষক কামাল হোসেন ফকির বলেন, এখানকার মানুষের আমিষের ঘাটতিজনিত রোগ-বালাই হয়না বললেই চলে। গ্রামের সবাই মৎস্য প্রকল্প থেকে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে আছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণীর অধ্যয়রণত ছাত্র, মৎস্য প্রকল্পে কর্মরত শামিম বলেন, আমাদের এখানে শিক্ষিত,অশিক্ষিত কেউ বেকার নেই। সবাই মাছ চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেকে জড়িয়ে রাখার সুযোগ পেয়েছে। যেমন উৎপাদন থেকে বিপনন পর্যন্ত বলেন তিনি। তথ্য, উপাত্ত পর্যালোচনা করে দাউদকান্দিকে মাছের ভান্ডারই মনে করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ছয় মাস চাষে ধান মৌসুম শুরুর আগে জমিতে আলাদা পরিচর্যা করার প্রয়োজন হয় না। জমি থাকে পরিছন্ন। ধান ফলাতে প্রয়োজন হয় না বাড়তি সারের। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্লাবন ভূমির মাছ চাষ, দাউদকান্দি মডেল এক সময় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। ইতিমধ্যেই দেশের অনেক জায়গায় প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ দাউদকান্দি মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। অনেকেরই প্রত্যাশা প্লাবন ভূমিতে বর্ষায় পানি ঢুকে বছরের অর্ধেকের বেশি সময় যে জমি জলের নিচে থাকে, সেখানে যদি সারাদেশে দাউদকান্দির প্লাবিত জমির মত মাছ চাষ করা যায়, তাহলে মৎস্য সম্পদ হবে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com