ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে নোয়াখালীর হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও সদর উপজেলায় গাছপালা, কাঁচা ঘর ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে লাইন ছিঁড়ে দুই লক্ষাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। তবে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেন, ৫০ হাজার গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা। স্থানীয়রা বলছে সিত্রাংয়ের প্রভাবে কার্যত বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ কারণে এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বুধবার বিকেল ৪টা নাগাদও স্বাভাবিক হয়নি। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রবিশস্য ও আমন ধান। জেলার সুবর্ণচরে গাছ ভেঙে পড়ে আফ্রিদি (১১ মাস) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয় শিশু আফ্রিদির মা আমেনা বেগম। খোঁজ নিয়ে যায়, গত সোমবার গভীর রাত থেকেই জেলার অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। জেলা শহরের বেশ কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও বিভিন্ন উপজেলায় এখনো বিদ্যুৎ নেই। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন নয়টি উপজেলার অবস্থা ব্যাপক নাজুক। অপরদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর জেলায় নিহত শিশুর পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কেন্দ্রীয় ম্যানেজিং বোর্ডের সদস্য ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন। বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরের দিকে জেলার সদর উপজেলার দাদপুর, সুবর্ণচরের পূর্ব চরবাটা, হাতিয়ার হরণী ও চানন্দী ইউনিয়নে এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া শাহিনের নিদের্শনায় দলীয় কর্মীরা জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী জনসাধারণকে নিজ নিজ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া, ঝড়ে পড়া গাছপালা কেটে পরিষ্কারসহ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নোয়াখালী ইউনিট কার্যালয়ের কর্মকর্তা আবদুল করিম, দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিপন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিনসহ আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নগদ ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে জেলার নয়টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ১৮৮টি খুঁটি ভেঙ্গে যায়, ১৯টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়ে, ৪৫০টি জায়গায় তার ছিঁড়ে যায়, ৬শতাধিক গাছ উপড়ে তারে পড়ে লাইন ছিঁড়ে যায়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের গ্রাহক সংখ্যা ৭ লাখ। এর মধ্যে সিত্রাংয়ের প্রভাবে এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেনা ৫০হাজার গ্রাহক। তবে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে তিনি দাবি করেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে বলেও মন্তব্য করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এ শীর্ষ কর্মকর্তা।