ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা আসুনসিয়নে অবস্থিত দ্যা লোপেজ প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট মারিও আব্দো বেনিতেজ-এর কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্টের কাছে তিনি মঙ্গলবার পরিচয়পত্র পেশ করেন।
প্রেসিডেন্ট বেনিতেজ রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসার পরিচয়পত্র সাদরে গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রদূতকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দূতাবাস ব্রাসিলিয়াতে নিযুক্ত থেকে সাদিয়া ফয়জুননেসা অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্যারাগুয়ের সমবর্তী দায়িত্ব পালন করবেন।
পরিচয়পত্র পেশের পর প্রেসিডেন্ট বেনিতেজের সাথে এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ ও ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও অবদান এবং সর্বোপরি বর্তমান বাংলাদেশে অর্জিত বিভিন্ন উন্নয়ন মাইল-ফলকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বেনিতেজকে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রদূত তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে প্রেসিডেন্ট বেনিতেজ এই আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেন এবং অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সফরের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের সাথে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে ভবিষ্যতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রেসিডেন্ট বেনিতেজ। বৈঠককালে প্যারাগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিও সিজার অ্যারিওলা রামিরেজ উপস্থিত ছিলেন।
প্যারাগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রামিরেজের সাথে পৃথক এক বৈঠকে রাষ্ট্রদূত ফয়জুননেসা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ এ কে আব্দুল মোমেনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র এবং বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত এ সময় জাতিসংঘের বিভিন্ন বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ফোরামে বাংলাদেশ ও প্যারাগুয়ের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলিও চিহ্নিত করেন।
আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রামিরেজ অভিভূত হন এবং বাংলাদেশকে একটি প্রগতিশীল দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্বি-পাক্ষিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ও প্যারাগুয়ে উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রামিরেজ গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশকে প্যারাগুয়েতে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। রাষ্ট্রদূতের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্যারাগুয়ে থেকে সরাসরি বাংলাদেশে সয়াবিন তেল আমদানি করার বিষয়ে পররাষ্ট্রন্ত্রী রামিরেজ সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। মারকসুরের বাজারে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
প্যারাগুয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া প্যাসিফিক ও ওশেনিয়া ডিভিশনের পরিচালক ফ্রান্সিসকো রবাট্রির সাথে পৃথক এক বৈঠকে রাষ্ট্রদূত প্যারাগুয়ের সাথে ফরেন অফিস কনসালটেশন বিষয়ক সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাব দেন।
এছাড়া, রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে ঔষধ রপ্তানি, গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার, প্লাস্টিক ও চামড়াজাত পণ্যে সম্ভবনাময় প্যারাগুয়ের বাজার সম্প্রসারণের জন্য কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য , ২০২০-২১ সালে বাংলাদেশ প্যারাগুয়েতে প্রায় ৩৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, ২০২১-২২ সালে এটি ৪১% বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮ লাখ ডলারে পৌঁছায়। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশ প্যারাগুয়ে থেকে মূলত ভোজ্য সয়াবিন তেল আমদানি করে থাকে। প্যারাগুয়ে হতে সয়াবিন তেল আমদানিতে ভারতের পরেই বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়াও রাষ্ট্রদূত ফয়জুননেসা, ফরেন ট্রেড ও মারকসুরের মহাপরিচালক আলবার্তো কাবালেরো এবং ফরেন ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক সান্টিয়াগো ব্লাসের-এর সাথে মারকসুরে বাংলাদেশের আগ্রহ এবং বাণিজ্যের সম্ভাবনা নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন।