টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে দুই দলের জন্যই ম্যাচটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতের কাছে বৃষ্টি আইনে ৫ রানের পরাজয়ে সেমির স্বপ্ন ঝুলে গেলো সাকিব আল হাসানদের। আর সেমির পথে একধাপ এগিয়ে গেলো ভারতীয় দল। বৃষ্টি আইনে ১৬ ওভারে ১৫১ রানের নতুন লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৬ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৫ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ভারতের দেওয়া ১৮৫ রানের লক্ষ্যের জবাবে বাংলাদেশ যেভাবে সূচনা করেছিল। তাতে জয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। লিটন দাসের বিস্ফোরক ফিফটিতে ৬ ওভারে উঠে ৬০ রান। সম্ভাবনা উবে যেতেও সময় লাগেনি বৃষ্টি হানার পর। অনেকক্ষণ খেলা বন্ধ থাকলে ওভার কমে ১৬ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫১। বিরতির পর লিটন রানআউট হতেই জয় থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে থাকে লাল-সবুজরা। ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফেরেন আফিফ, সাকিব, ইয়াসির ও মোসাদ্দেক।
মোসাদ্দেক যখন সাজঘরে ফেরেন তখনও মনে হচ্ছিল জয় বুঝি আর সম্ভব নয়। ১৮ বলে আর ৪৩ রান প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নুরুল হাসান-তাসকিন চার-ছক্কা মেরে শেষ ওভারে সমীকরণটা ৬ বলে ২০ রানে নামিয়ে এনেছিলেন। এই ওভারে একটি চার, একটি ছয় মেরে টাই করারও সম্ভাবনা সোহান তৈরি করেছিলেন। শেষ বলে ১ রান আসায় ৫ রানের হার নিয়েই বাংলাদেশকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। শেষ দিকে কার্যকরী ইনিংস উপহার দেওয়া সোহান ১৪ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৫ রানে অপরাজিত থেকেছেন। ৭ বলে তাসকিন অপরাজিত ছিলেন ১২ রানে।
ভারতের হয়ে আরশদ্বীপ সিং ৩৮ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন। হার্দিক পান্ডিয়াও ২৮ রানে দুটি। ২৫ রানে একটি শিকার মোহাম্মদ সামির।
বিপদে বাংলাদেশ
দারুণ ওপেনিং জুটির পর লিটন-শান্ত ফিরলে নতুন নামা সাকিব-আফিফের ওপর নির্ভর করছিল অনেক কিছু। কিন্তু আফিফ ৫ বলে ৩ রানই করতে পেরেছেন। আরশদ্বীপের বলে ক্যাচ উঠিয়ে ফিরেছেন। তিন বল পর একইভাবে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। তাতে বিপদই বাড়ে বাংলাদেশের।
নতুন নামা ইয়াসির আলীও আগের ব্যাটারদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। পান্ডিয়ার বলে ১ রানে ফিরেছেন। তার পর মোসাদ্দেক হোসেনও দ্রুত সময়ে মাত্র ৬ রানে ফিরলে পরাজয়ের সব বন্দোবস্ত হয়ে যায় টাইগারদের।
লিটনের পর ফিরলেন শান্তও
লিটন ফিরতেই হাত খুলছিলেন শান্ত। কিন্তু চাপের মুহূর্তে বেশি দূর যেতে পারলেন না। তাকে দশম ওভারের প্রথম বলে সূর্যর ক্যাচ বানিয়েছেন সামি। শান্ত ফেরার আগে ২৫ বলে ২১ রান করেছেন। তাতে ছিল একটি চার ও একটি ছয়।
বৃষ্টি বিরতির পর রানআউট লিটন
বৃষ্টি বিরতির পর মাঠে নামলেও ছন্দপতন ঘটেছে বাংলাদেশের। রানআউটে ফিরেছেন দারুণ শুরু এনে দেওয়া লিটন। অষ্টম ওভারে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়েছেন ২৭ বলে ৬০ রান করা লিটন। তাতে শুরুতে যে ছন্দ ছিল তাতে ব্যাঘাত ঘটেছে। তার ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৩টি ছয়। আউট ফিল্ড ভেজা থাকায় অবশ্য রান নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে দুই ওপেনারের।
১৬ ওভারে নতুন লক্ষ্য ১৫১
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের দেওয়ায় ১৮৫ রান তাড়ায় বিস্ফোরক ব্যাটিং চলছিল লিটন দাসের। ২১ বলে তুলে নেন ফিফটি। ৭ ওভার শেষ হতে বৃষ্টি বাগড়া দিলে খেলা বন্ধ থাকে অনেক্ষণ। তার পর ওভার কমিয়ে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৬ ওভারে করতে হবে ১৫১ রান। অর্থাৎ ৫৪ বলে আর ৮৪ রান লাগবে বাংলাদেশের।
বৃষ্টি নামার আগে ভারতের বিপক্ষে ৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ৬৬। তখন ক্রিজে ছিলেন লিটন দাস (৫৯) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৭)।
লিটনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতেই ৬০
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের দেওয়া ১৮৫ রানের লক্ষ্যে আক্রমণাত্মক সূচনা করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওভার দেখে শুনে খেলার পর ঝড়ো গতিতে রান তুলছেন লিটন দাস। দ্বিতীয় ওভারে আরশদ্বীপ সিংয়ের বলে একটি ক্যাচ উঠলেও সেটি গ্লাভসে জমা পড়ার আগে মাটিতে ড্রপ খেয়েছে।
তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে তো চার ছক্কা মেরে অ্যাডিলেড মাতিয়ে তুলেন লিটন। একই ওভারে আবারও লিটনের ক্যাচ উঠেছিল। কঠিন সুযোগ হাতে জমাতে পারেনি কেউ। পরে তো পাওয়ার প্লের ষষ্ঠ ওভারে ২১ বলে ছক্কা মেরে পূরণ করেন ফিফটি। লিটনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ৬ ওভারেই বিনা উইকেটে যোগ হয়েছে ৬০ রান।
বাংলাদেশকে ১৮৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছে ভারত
সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে দুই দলের জন্যই ম্যাচটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এমন ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৮৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছে ভারতীয় দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে টস হেরে ভারত ৬ উইকেটে ১৮৪ রান করেছে।
টস জিতে বোলিংয়ে শুরুতে ভারতকে ভালোই চাপে রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে নিতে পারে একটি উইকেট। তার পর তো লোকেশ রাহুল-বিরাট কোহলির ব্যাটেই বড় স্কোরের ভিত গড়া।
শুরুটা করেন রাহুল। ৩২ বলে ৫০ রান করেছেন। যাকে ঘিরে বেশি আলোচনা সেই সূর্যকুমার ৩০ রানের বেশি করতে পারেননি। বিপজ্জনক এই ব্যাটার থাকলে স্কোরটা হয়তো আরও বেশি হলেও হতে পারতো। তাকে ৩০ রানে বোল্ড করেছেন সাকিব। বাংলাদেশের কৃতিত্ব ডেথ ওভারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছিল। তার পরেও ভারতকে সমৃদ্ধ স্কোরবোর্ড পাওয়া থেকে রুখতে পারেনি। যার পেছনে বড় অবদান কোহলির ঝড়ো ব্যাটিং। ভারতীয় এই ব্যাটার ৪৪ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ১টি ছয়।
শেষ ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের (১৩*) ক্যামিও ইনিংসে ভারত ৬ উইকেটে ১৮৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছে। অশ্বিনের ৬ বলের ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছয়।
৪৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। ৩৩ রানে দুটি সাকিব আল হাসান। ৫৭ রান দিয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিলেন শরিফুল। তিনি কোনও উইকেট পাননি।
দ্রুত কার্তিক-অক্ষরকে ফিরিয়েছে বাংলাদেশ
চাহিদা মিটিয়ে রান তোলার সময় উইকেটের পতন ঘটায় কোহলি-কার্তিক জুটির ওপর প্রত্যাশা ছিল অনেক কিছু। কিন্তু কার্তিকের দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে তাদের জুটিতে ২০ রানের বেশি যোগ হয়নি। তার পর ফিরে যান অক্ষর প্যাটেলও। অক্ষরকে ৭ রানে সাকিবের তালুবন্দি করিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
পান্ডিয়াকে টিকতে দিলেন না হাসান
সূর্য-কোহলির ৩৮ রানের জুটি ভাঙার পর পান্ডিয়ার ওপর নির্ভর করছিল অনেক কিছু। কিন্তু ভারতীয় মারকুটে অলরাউন্ডারকে থিতুই হতে দেননি হাসান মাহমুদ। শর্ট বলে সহজ ক্যাচে পান্ডিয়াকে ৫ রানে তালুবন্দি করিয়েছেন।
উত্তাপ ছড়ানোর আগেই সূর্যকে বোল্ড করলেন সাকিব
সূর্যর কঠিন ক্যাচ উঠলেও সেটি হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ। তার পর হাত খুলতে খুলতে ভয়ানক হয়ে উঠার পথে ছিলেন ভারতের ফর্মে থাকা এই ব্যাটার। ১৩তম ওভারে সাকিব এসে সূর্যকেই বোল্ড করেছেন।
ফেরার আগে অবশ্য ১৬ বলে ৪টি চারে ৩০ রানের কার্যকরী ইনিংস উপহার দিয়েছেন।
কোহলি-সূর্যকে আউট করার সুযোগ মিস
১১তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে কোহলিকে রানআউটের সুযোগ মিস করেন সাকিব। পরের ওভারে আবার সাকিবের বলে সূর্যকুমার যাদবের কঠিন ক্যাচ ছাড়েন মোস্তাফিজও।
ফিফটি করা রাহুলকে ফেরালেন সাকিব
বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্লথ শুরুর পর ভারতের ইনিংসে প্রাণ ফেরাতে থাকেন লোকেশ রাহুল। এই ম্যাচ দিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে ফিফটিও তুলে নিয়েছেন ঝড়ো ইনিংসে। কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে ৬৭ রানের পার্টনারশিপে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দশম ওভারে বিপজ্জনক রাহুলকেই তালুবন্দি করিয়েছেন সাকিব।
ফেরার আগে রাহুল ৩২ বলে ৫০ রান করেছেন। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ৪টি ছয়।
পাওয়ার প্লেতে ভারত নিতে পারলো ৩৭ রান
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে ব্যাটিয়ে পাঠিয়ে পাওয়ার প্লেতে তাদের খুব বেশি রান নিতে দেয়নি বাংলাদেশ। ৬ ওভারে ১ উইকেটের বিনিময়ে ভারতীয় দল ৩৭ রান তুলতে পেরেছে।
ক্যাচ ছেড়ে সেই হাসানই ফেরালেন রোহিত শর্মাকে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টস জিতে বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা যে সঠিক ছিল। সেটি শুরুতেই প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে পেস আক্রমণ শাণিয়ে শুরুতেই তাদের চেপে ধরতে পেরেছে। চতুর্থ ওভারে হাসান মাহমুদের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ওপেনার ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ৪ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ ১ উইকেটে ২২ রান।
শুরুতে তাসকিন আহমেদের গতিতে ধুঁকতে দেখা গেছে দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মাকে। ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটাতে পারছিলেন না। তৃতীয় ওভারে তাসকিনের বলে ক্যাচও তুলেছিলেন রোহিত। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে তার ক্যাচ ছেড়েছেন হাসান মাহমুদ। পরের অবশ্য বোলিংয়ে এসে সেই রোহিতকেই ইয়াসিরের ক্যাচ বানিয়েছেন। ফেরার আগে ভারতের অধিনায়ক ৮ বলে করেছেন মাত্র ২ রান!
টস জিতেছে বাংলাদেশ, একাদশে একটি পরিবর্তন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে টস জিতেছে বাংলাদেশ। ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
বৃষ্টি শঙ্কা থাকলেও টসটা ঠিকমতোই হয়েছে। বাংলাদেশ উইনিং কম্বিনেশন ভেঙে একটি পরিবর্তন এনেছে। সৌম্য সরকার বাদ পড়েছেন। তার জায়গায় পেসার শরিফুল ইসলামকে নেওয়া হয়েছে। তার মানে দলে পেসার চারজন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে শক্তিশালী ভারতকে হারাতেই হবে বাংলাদেশকে। অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। ২০১৫ সালে এই মাঠেই শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ও ভারত তিন ম্যাচ খেলে একটি করে ম্যাচ হেরেছে। পয়েন্ট সমান ৪ হলেও নেট রান রেটে এগিয়ে রয়েছে রোহিত শর্মার ভারত। সেমিফাইনালের পথে তাই দুই দলেরই জয়ের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, দিনেশ কার্তিক, অক্ষর প্যাটেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ সামি ও আরশদ্বীপ সিং।