জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় বিভিন্ন চরাঞ্চলে এখন বাল্য বিয়ের ছড়াছড়ি। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় বাল্য বিয়ে যেন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানাযায়, উপজেলার গাইবান্দা.কুলকান্দি,বেলগাছা ও সাপধরি ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চলে করোনার পরবর্তি বাল্য বিয়ে চরম ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গাইবান্দা ইউনিয়নের চরদাদনা পূর্ব ও পশ্চিম পাড়া ,বটচর, পোড়ারচর কান্দারচর,গংগাপাড়া,নাপিতেরচর এলাকায় বাল্য বিবাহের ছড়াছড়ি। এছাড়া উপজেলার কুলকান্দি ইউনিয়নের হরিণধরা, চরবেড়কুশা, বেলগাছা ইউনিয়নের মুন্নিয়ারচর,সিন্দুরতলী, শিশুয়া, এবং সাপধরি ইউনিয়নের চরচেঙ্গানিয়া, চর শিশুয়া, কালিরচর, চরবিশরশি যমুনার দ্বীপচর গুলোর বিভিন্ন প্রত্যান্তাঞ্চলে বাল্য বিয়ে যেন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পড়–য়া পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণীর ১২ থেকে ১৫বছর বয়সের কোমলমতি ছাত্রীদের বাল্য বিবাহ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে গাইবান্দা ইউনিয়নের আব্দুস ছাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী মোছা. নিজামনি, দিনারা খাতুন, এবং পোড়ারচর এস এম এ দাখিল মাদ্রাসার ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী মোছা. নাঈমা খাতুন, পোড়ারচর পশ্চিম পাড়ার ছাবিনা খাতুন(১৪) একই মাদ্রাসার ৯ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী চরদাদনার বাসিন্দা মোছা. রিমি খাতুন উল্লেখ যোগ্য। এসব কোমলমতি শিক্ষার্থী যেন মা-বাবা’র বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সময় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কিংবা বই-পুস্তক হতে নিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের কথা। সে সময় অভিভাবকরা শিশুমনা মেয়েদের বিয়ের নামে তোলে দিচ্ছেন দ্বিগুন বয়সি স্বামীর হাতে। এসব বাল্য বিবাহে ছেলে পক্ষের যৌতুক লোভে,এবং মেয়ে পক্ষের সামান্য যৌতুক কিংবা বিনা যৌতুকে স্বামীর ঘরে তোলে দিচ্ছেন শিশু কন্যাকে। এসব শিশু কন্যার স্বামীর সংসার সাময়িক সুখের হলেও পরবর্তি দুই-একটি সন্তান হলেই নেমে আসে অশান্তির ঢেউ। অনেক স্ত্রী বেছে নেয় আত্মহণনের পথ। বর্তমান সরকার বাল্য বিয়ে/বহু বিবাহ নিরোধ কল্পে কঠোর অবস্থানে থাকলেও সেদিক কর্ণপাত করছেন না কন্যার পিতা-মাতারা। এ ব্যাপারে পোড়ারচর এস এম এ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মৌলনা আনিছুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,আমি শিক্ষার্থীর পিতা-মাতাকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তারা গোপনে রাতে মেয়ে বিয়ে দিয়ে স্বামীর ঘরে পাঠিয়েছেন। আব্দুস ছাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের কাছে ৭ম শ্রেনীতে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বাল্য বিবাহের কথা জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন আমি কিছু জানি না। উল্লেখিত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন ক্লাস টির্চার মিষ্টার আব্দুর রহিম বলতে পারবেন। ক্লাস টির্চারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,অনেক দিন ধরে ঐসব শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে বলে জানান।এদিকে সচেতন এলাকাবাসির অভিযোগ, বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে কাজী সাহেব না’কি মুল নিকাহ রেজিষ্টার নিবন্ধন না করে লোজ সীটে বর-কণের বিবরণ লিখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে থাকেন। পরবর্তি মেয়ের বয়স পূর্ণ হলে কাবিলের কাগজ অভিবাবকদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন।এ বিষয়ে গাইবান্দা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্টার কাজী শফিকুল ইসলাম লাল মিয়া’র কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করে বলেন,অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েদের পিতা-মাতারা নোটারী পাবলিক করে বয়স বাড়িয়ে এনে বিয়ে দিচ্ছেন। এতে আমার করার কিছুই নেই। এসব বাল্য বিয়ে আপনি রেজিষ্ট্রি করেছেন কি’না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিয়ে না পড়াতে চাইলে সাজিমারা কাজী এসে গোপনে বিয়ে পড়ায় বলে অভিযোগ করেন। অপর দিকে ১০নং গাইবান্দা ইউপির চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনসারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি পরিপত্রে জন্ম নিবন্ধনে মেয়ে ১৮ বৎসর এবং ছেলে ২২বয়সের নীচে কোন ক্রমেই বিবাহ দেয়া কিংবা করানো যাবে না। যা ইউনিয়নের সকল কাজীগণের নির্দ্দেশ দেয়া হয়েছে।অপরদিকে বাল্য বিয়ের গ্যারাকলেপড়া শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি অশ্রুসিক্ত জলে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন,আমার ইচ্ছা ছিল,উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সম্মান জনক কর্মে যুক্ত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবো। কিন্তু সে আশা পুরণ হলো না। কারণ মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে পিতা-মাতার ইচ্ছার বিরোদ্ধে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান রুমান জানান, আমি বাল্য বিয়ে সম্পর্কে খবর পেলেই তাৎক্ষনিক গিয়ে বন্ধ করি। তিনি আরো বলেন,দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।