বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

করোনাভাইরাস: টাকার মাধ্যমে ছড়ানোর সম্ভাবনা কতটা, কী করবেন?

বিবিসি বাংলা, ঢাকা
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

 

 

 

ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরণের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করার ঘটনা নতুন নয়। এমনকি ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সংক্রামক নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৫ সালে দিল্লির ইন্সটিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি-র বিজ্ঞানীরা তাদের এক গবেষণার ফলে জানান, ভারতের বাজারে চালু নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে তাতে অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন – যা থেকে মারাত্মক সব রোগ ছড়াতে পারে।

এমনকি বাংলাদেশের একদল গবেষক গত বছরের অগাস্ট মাসে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এমন ধরণের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন, যা সাধারণত মলমূত্রের মধ্যে থাকে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্রী নিশাত তাসনিম প্রায় ছয় মাস ধরে বাজারে প্রচলিত টাকা ও কয়েন নিয়ে গবেষণা করে বলেন, এসব মুদ্রায় তিনি ই-কোলাই জাতীয় ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন।

১৫টি উৎস থেকে নেয়া কাগজের টাকার নোট ও কয়েনে এক হাজারের চেয়ে আরো অনেক বেশি মাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখেছেন তারা। এক হাজার মাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াকে সহনশীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী টাকা নিয়ে করা ওই গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।

এর আগে তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন, “এ পরীক্ষায় আমরা যা পেয়েছি তা জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়াবহ। কারণ সাধারণ ব্যাকটেরিয়া তো আছেই, সাথে পাওয়া গেছে মানুষের মল মূত্র থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক”।

ফলে এসব মুদ্রার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।

ড. চৌধুরী বলেন, যেহেতু আমরা গবেষণা করে টাকায় বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি যা মানুষের অন্ত্রে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি করে তাই এর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়।দেশের মধ্যে নয় বরং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে তার মতে, টাকা বা ডলারের ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক বিনিময়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস শুধু একটি দেশের মধ্যে নয় বরং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। “যেহেতু এটা সরাসরি মানুষ হাত দিয়ে ধরে, অনেক সময় মুখের থুথু নিয়ে কাউন্ট করে। তাই এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেখান থেকে এটা হতে পারে যদি মানুষ সে হাতে খায়, মুখে দেয়।”

তিনি জানান, ভাইরাস বাহকের শরীরে সক্রিয় হয়, অন্যত্র নিষ্ক্রিয় থাকে। টাকায় থাকলে সে হয়তো নিষ্ক্রিয় থাকে, কিন্তু মানুষের সংস্পর্শে এলে সেটি করোনাভাইরাসের উপসর্গ বা রোগের সৃষ্টি করতে পারে, এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

এমন আশঙ্কায় চলতি বছরের গতমাসে ভাইরাসে উপস্থিতি নিয়ে টাকা বা ব্যাংক নোট জীবাণুমুক্ত করার একটি উদ্যোগ দেখা যায় চীনে।

দেশটিতে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সেখানে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে বাজার থেকে ব্যাংক নোট সরিয়ে নিয়ে তা আবার জীবাণুমুক্ত করে বাজারে ছাড়ে দেশটি। বাংলাদেশে অবশ্য এখনো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ পর্যন্ত একশোটিরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করলেও তাতে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি।

মুদ্রার মাধ্যমে সংক্রমণ এড়াবেন যেভাবে

বিশ্বজুড়ে এমন আশঙ্কার পর বিশেষজ্ঞরা, ব্যাংক নোট এড়িয়ে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্পর্শবিহীন লেনদেন বা প্রযুক্তি বলতে, ব্যাংক নোট ছাড়া অন্য মাধ্যম যেমন কার্ড, বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ যেমন বিকাশ বা নগদ অথবা অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের কথা বোঝানো হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে প্রায় শতভাগ লেনদেন হয় ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সেখানে কিভাবে এই পরামর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বএক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরণের পরামর্শ মেনে চলা কঠিন। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংক নোট ব্যবহারের বিষয়ে তারা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

জাতীয় রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু এখনো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি তাই এখনই এ বিষয়ে বলাটা কঠিন।

তবে যদি শনাক্ত করা হয়, সেক্ষেত্রে ভাইরাসটি যাতে অতিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ব্যাংক নোট ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।

এক্ষেত্রে কিছু পরামর্শের কথা বলছেন মাহমুদুর রহমান:

  • অবশ্যই টাকা গোনার সময় হাত দিয়ে মুখের লালা নেবেন না
  • ব্যাংক নোট বা টাকা নাড়াচাড়ার পরপরই অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • যারা অত্যধিক মুদ্রা নাড়াচাড়া করেন, যেমন ব্যাংক কর্মী বা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা, তাদেরকে অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। তারা দস্তানা বা গ্লাভস পরে নিতে পারেন।
  • সতর্কতা হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে পারেন।
  • টাকা ধরা বা ব্যবহারের পর পরই চোখ, নাক বা মুখে হাত দেয়া যাবে না।

 




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com