এনআরসি ইস্যু নিয়ে আবারও কড়া মন্তব্য করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পুনর্বাসন ছাড়া কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এ নেত্রী।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘সবকিছু হারিয়ে বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ এসেছেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যারা এসেছেন, সরকারের চুক্তি অনুযায়ী তারা সবাই ভারতের নাগরিক। কিন্তু কখনো কখনো ভাঁওতা দেওয়া হয় যে, তুমি নাগরিক নও। আমার প্রশ্ন ওরা যদি নাগরিক না হয়, তবে ভোট দিলো কীভাবে?’ গত বুধবার (২৩ নভেম্বর) কলকাতা নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে জমির পাট্টা প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘তাদের ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়ে, দোকান চালায়, তাদের প্রত্যেকের আধার কার্ড আছে, রেশন কার্ড আছে, তারা ভোটও দেয়। সেই সব সাধারণ মানুষের ভোটেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়। তারপরও বলা হচ্ছে, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এর অর্থ তাদের নাগরিকত্বকে অসম্মান করা।’ এনআরসি নিয়ে জটিলতায় থাকাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘এখন ভোটার তালিকার সংশোধনের কাজ চলছে। ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চলবে। এনআরসি-এর নাম করে আপনাদের যাতে কোথাও থেকে নাম কেটে না দিতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সশরীরে সংশোধনী কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলে আসুন। দেখে আসুন, আপনার নাম সেই তালিকাতে আছে কি না? না হলে কোনোদিন হয়তো ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হতে পারে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় আপনার নাম ঠিক থাকবে। কিন্তু আপনার স্বামীর নাম ভুল হবে। আপনারা আসামে দেখেছেন, কত লাখ মানুষের নাম কেটে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আরেকটা পরিকল্পনা শুরু হয়েছে, তাই আপনাদের বলবো, নিজের স্বার্থেই নিজেরা নিজেদের নাম তুলুন। না হলে আগামীকাল হয়তো বলে দিতে পারে যে আপনাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। যদিও এসব আমরা করতে দেবো না। তাই আপনাদের কাছে একটাই অনুরোধ দয়া করে ভোটার তালিকায় নামটা তুলবেন।’ ১০০ দিনের কাজের রুপিসহ একাধিক প্রকল্পের অর্থ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘রাজনীতির স্বার্থে বাংলাকে যারা বদনাম করে রুপি না দিয়ে অর্থনৈতিক অবরোধ করার কথা বলে, তাদের নাম বলতে আমার লজ্জা করে। আমরাও বিরোধী রাজনীতি করেছি। কিন্তু কোনোদিন উন্নয়নকে স্তব্ধ করিনি। গরিব মানুষের টাকা বন্ধ করে দেইনি।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মানুষের অধিকার দিচ্ছি এবং তা আগামী দিনেও দেবো। আমি মানুষের জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে রাজি আছি। কিন্তু কোনোদিন মানুষের সঙ্গে বেইমানি করে রাজনীতি করবো না। এটা আমার স্বভাব নয়।’ ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে এনআরসি চালু আছে, সেটি হলো আসাম। দুই বছর আগে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েন ১৯ লাখ মানুষ। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি চালু করতে। যদিও প্রথম থেকেই তার প্রবল বিরোধিতা করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস।