প্রকৃতিতে ঋতুর পরিবর্তন আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। শীত ও গ্রীষ্ম খোদারই দান। সারা দুনিয়ায় কোথাও দুই ঋতু, কোথাও তিন বা চার ঋতু, কোথাও আবার ছয় ঋতু বিদ্যমান। আল কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কুরাইশদের আগ্রহের নিমিত্তে! তাদের অনুরাগ হলো শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণে। অতএব তারা যেন ইবাদত করে এই (কাবা) গৃহের প্রভুর জন্য। যিনি তাদিগকে ক্ষুধায় অন্ন দান করেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা প্রদান করেন।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ১-৪) জমাদিউল আউয়াল হলো আরবের শীতকাল। হিজরি ক্যালেন্ডারের প ম মাস হলো ‘জমাদিউল আউয়াল’। এর জোড়া মাস হলো ‘জমাদিউস সানি’। এই মাস দুটিকে বলা হয়, ‘আল জুমাদাল উলা’, ‘আল জুমাদাল উখরা’ বা ‘আল জুমাদাল আখিরাহ’ অথবা ‘আল জুমাদাস সানিয়াহ’। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে এই মাস দুটি ‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে সমধিক পরিচিত।
জিকির, দোয়া কালাম, দরুদ ও সালাম, তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-ইস্তিগফার, তিলাওয়াত, সদকা খয়রাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মাস অতিবাহিত করলে, এর বরকত ফজিলত ও কল্যাণ লাভ হবে। অন্যথায় সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে হবে
এর বাংলা অর্থ হলো প্রথম জুমাদা ও দ্বিতীয় জুমাদা; অর্থাৎ শীতকালের প্রথম মাস ও দ্বিতীয় মাস। (আল মুনজিদ)। এই দুই মাসকে একত্রে ‘জুমাদায়ান’ বা ‘জুমাদায়িন’ বলা হয়। বহুবচন হলো ‘জুমাদাত’। কোরআন মাজিদে শব্দটি ‘জামিদাহ’রূপে মাত্র একবার এসেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তুমি পর্বতমালা দেখছ, মনে করছ উহা স্থির অবিচল, অথচ তারা মেঘমালার ন্যায় স ারমান। এ আল্লাহরই সৃষ্টি নৈপুণ্য, যিনি সবকিছুকে সুষম করেছেন। তোমরা যা করো সে বিষয়ে তিনি সম্যক অবহিত।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৮৮)
‘জুমাদা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ স্থির, অবিচল, দৃঢ়, কঠিন; জমাটবদ্ধ, নিস্তব্ধ, নীরব, নিথর; শুষ্ক, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত; শীতল, শীতকাল, শীতবস্ত্র; কার্পণ্য, বদ্ধ মুষ্টি; অস্থির সময়, চিন্তাযুক্ত অবস্থা। যেহেতু আরব দেশে শীতকালে প্রচণ্ড শীতে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তুষারে পরিণত হয় এবং পানি জমে বরফে পরিণত হয়; জড় পদার্থ জমে কঠিন হয়ে যায়; উদ্ভিদ ও জীব নিথর হয়ে পড়ে; প্রাণীরা নীরব হয়ে যায়; তাই এই মাসকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে। দুই ভূমির সীমানা বা দুই বাড়ির সীমানাকে এবং নিকট প্রতিবেশীকেও ‘জুমাদা’ বলা হয়। ইমাম আজম আবু হানিফা (রা.) বলেন, ‘জুমাদা’ হলো আরব দেশের শীতকাল, এটি বসন্তের নিকটবর্তী; গ্রীষ্মের পূর্বে। মাসের নামের মধ্যে যেসব অর্থ বিদ্যমান, তা তিন প্রকার—ইতিবাচক, নেতিবাচক ও মধ্যবর্তী। সুতরাং ইতিবাচক অর্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশি বেশি নেক কাজ বা সৎকর্ম সম্পাদনে ব্রতী হওয়া, নেতিবাচক অর্থগুলো অনুধাবন করে নিজের মধ্যে থাকা সব নেতিবাচক অভ্যাস বর্জন করা এবং মধ্যপন্থায় স্থিতিশীল হওয়া ও সাফল্য লাভের জন্য নিরন্তর সচেষ্ট থাকা। এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে নানান বিষয় বর্ণিত রয়েছে। নেক আমল ও সৎকর্ম দ্বারা সাধারণ সময়ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। নতুন মাসে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া সুন্নত। জীবনের প্রতিটি দিনই নতুন দিন, প্রতিটি সময়ই নতুন; তাই নেক আমলের মাধ্যমে সময়কে মূল্যবান করে তুলতে হবে।
প্রতি মাসের আমল হলো নিয়মিত ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত ও নেক আমল করা। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি অন্যান্য নামাজ তথা তাহাজ্জত, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউওয়াবিন নামাজ আদায় করা। কাজা রোজা ও মানত রোজা থাকলে তা পুরা করা। চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’ রোজা রাখা, যা হজরত আদম (আ.)-এর সুন্নত। সপ্তাহে প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রিয় নবীজি (সা.)-এর প্রিয় সুন্নত রোজা রাখা।
জিকির, দোয়া–কালাম, দরুদ ও সালাম, তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-ইস্তিগফার, তিলাওয়াত, সদকা খয়রাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মাস অতিবাহিত করলে, এর বরকত ফজিলত ও কল্যাণ লাভ হবে। অন্যথায় সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে হবে। হাদিস শরিফে আছে, পরকালে নেককার মুমিন জান্নাতিদের কোনো আফসোস থাকবে না; তাদের আফসোস থাকবে শুধু ওই সময়ের জন্য যে সময়গুলো তারা নেক আমল ছাড়া অতিবাহিত করেছে বা বেকার কাটিয়েছে। (তিরমিজি)। লেখক:মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী,যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম, ইমেইল:
smusmangonee@gmail.com