আমাদের পুষ্টিবিদদের কাছে, ওজন কমানোর অনেক রোগীই এসে বলেন অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও কিটো ডায়েটের কথা। এই সব রোগীদের ধারণা, এগুলো ম্যাজিক। এসব ছাড়া ওজন কমানো সম্ভব নয়।
বিভিন্ন ধরনের ভিনেগার পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন ফল, শস্য দানা ইত্যাদি হতে তৈরি হয়। অ্যাপল সিডার ভিনেগার আপেল হতে তৈরি গাঁজনযুক্ত খাবার, তবে দইয়ের মতো এতে প্রোবায়োটিক নেই। পরিবর্তে, উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া গঠন করে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার বা অন্য যে কোন ভিনেগার, দুবার গাঁজন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়। প্রথমে, অ্যাপলকে অ্যালকোহলযুক্ত সিডারে পরিবর্তন করে এবং তারপরে ভিনেগারে পরিণত করে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার বা অন্য যে কোনো ভিনেগারে রয়েছে প্রচুর উপকারিতা: অ্যাপল সিডারে রয়েছে পলিফেনল,এটি উদ্ভিদ যৌগ যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পলিফেনল শরীরের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল এবং কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে, আপনার নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এটি রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের অন্ত্রকে পরিষ্কার করে। ত্বকের ও চুলের সুরক্ষার জন্য উপকারী। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে মাউথওয়াশের ন্যায় কাজ করে।
এতো সব গুন দেখে ভাবছেন কাল হতেই খাওয়া শুরু করবেন এই ভিনেগার। কিন্তু মনে রাখবেন, নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী না খেলে এটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মূলত এর গুনাগুনের থেকে জটিল। অ্যাপল সিডার ভিনেগার দীর্ঘ দিন খেলে মারাত্মক এসিডিটি। এমনকি আলসারও হতে পারে। দীর্ঘ দিন পরিমিত ও সঠিক উপায়ে পান করলে কিডনি জটিলতা দেখা দেয়। ডায়বেটিস রোগীদের জন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাবার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কারণ কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিকসের ওষুধের সঙ্গে এর বিক্রিয়া হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা ইনসুলিনের পাশাপাশি যদি ভিনেগার গ্রহণ করেন,তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (ব্লাড সুগার কমে যাওয়া) হতে পারে।
দীর্ঘ দিন অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করলে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও জিহ্বায় ক্ষত সৃষ্টি হয়।
ঘুমোতে যাওয়ার আগে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খাবেন না। এতে খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেলে আধ ঘন্টা শরীরকে বিশ্রাম দিতেই হবে। খাওয়া, ঘুম কোনোটাই ঠিক নয়। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণ করা ক্ষতিকর। এর ফলে হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দীর্ঘ সময় ধরে পান করলে হাড় থেকে খনিজগুলো বের হয়ে যায়। উচ্চ অ্যাসিডের মাত্রায় নতুন হাড়ের গঠনও হ্রাস করতে পারে।
অপরিশোধিত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করলে হজমজনিত সমস্যা হতে পারে আবার অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আপনার দেহ থেকে টক্সিন বাহির হয়ে যেতে সাহায্য করে। এ দুটি থেকে পলি ইউরিয়া হতে পারে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের গন্ধ শোঁকার অভ্যাস এড়িয়ে চলুন। যদি শ্বাসযন্ত্রে কোনো সমস্যা থাকে তাহলে গন্ধ শুঁকবেন না। এতে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে। ফুসফুস ড্যামেজও হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সেবন করলে তা গলা, ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকর। তাই সব সময় অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করার পূর্বে বা ত্বকে, চুলে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে মিশিয়ে নিন। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের পিলের পরিবর্তে তরল অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করুন। যদি ট্যাবলেট সেবন করেন তাহলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের জন্য নিরাপদ কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে এ সময় অনেক ধরনের ওষুধ সেবন করতে হয় ফলে একটা ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশন ভয় থাকে।
এছাড়াও কারো কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণের ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয় ফলে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, চুলকানি, পেটেব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও ত্বক লাল হয়ে যাওয়া বা র্যাশের সমস্যা হতে পারে। এখন আসি কিভাবে আমরা এটি খেতে পারি। প্রথমত আমি বলবো এটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ও নিয়ম অনুযায়ী কিছু দিন খাবেন।
আমাদের প্রিয় নবীজী (সাঃ) রুটি ভিনেগার দিয়ে খেতেন। এমনকি তরকারিতে তখন এটি ব্যবহার জানা যায়। এটি রান্নায়, সালাদে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি অম্লীয় হওয়ায়; কখনো সরাসরি খাওয়া, ত্বকে বা চুলে ব্যবহার করবেন না। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সঠিক ব্যবহার হলো, রক্তে কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণের জন্য। সেটা হবে অল্প সময় ও নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী। পরামর্শ দিয়েছেন: আমেনা জান্নাত নিপাপুষ্টিবিদ, ল্যাবজোন স্পেশালাইজড হসপিটাল।