ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়ে এখন পর্যন্ত তৃতীয় বর্ষের গণ্ডি পার হতে পারেননি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ঢাবির সিনেট সদস্য তিলোত্তমা শিকদার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থীরাই ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের প্রথম ব্যাচ। এক বছরের সেশনজটসহ এই ব্যাচের নিয়মিত অনার্স শেষ হয় ২০১৮ সালে। তিলোত্তমা শিকদার সেই ব্যাচের সাথে সর্বশেষ ২০১৬ সালে তৃতীয় বর্ষের প ম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু প ম সেমিস্টারের রেজাল্ট শিটে তার নাম না আসায় তিনি ষষ্ঠ সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
এই বিষয়ে বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি ইয়ারের দুই সেমিস্টারের কোনো কোর্সে ফেল গিয়েও যদি কারো গড় সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরে হয় তাহলে সে পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবে। আর যেগুলোতে সে ফেল করেছে পরবর্তী দুইটি ব্যাচের সাথে সেই কোর্সগুলোর ইম্প্রুভমেন্ট দিতে পারবে। আর যদি দুইটা ব্যাচ ওভার করে ফেলে তাহলে তাকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে সেই কোর্সের পরীক্ষা দিতে হবে। তিনি বলেন, তার (তিলোত্তমা) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের গড় সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরে না আসায় তার নাম রেজাল্ট শিটে আসেনি। আর তার প্রথম সেমিস্টারের একটি, দ্বিতীয় সেমিস্টারের দুইটি আর চতুর্থ সেমিস্টারে একটি কোর্সে ফেল আছে। সুতরাং গড় সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরে না আসার এটাও একটা কারণ হতে পারে। এখন তিনি যদি চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হতে চায় তাহলে তাকে আগের বাকি থাকা চার কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে হবে। এসব পরীক্ষা দিয়ে সেসব পরীক্ষার রেজাল্ট মিলিয়ে যদি তার সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরে হয় তাহলে তিনি চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবেন। আট সেমিস্টারের সব কোর্সের মধ্যে যদি একটা কোর্সেও কোনো শিক্ষার্থী ফেল করেন। সেই কোর্সে পাস না করা অবদি কেউ অনার্স পাস করতে পারবে না। এর মধ্যে তিলোত্তমা শিকদার ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সদস্য পদে ডাকসু নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। এরপর জুন মাসে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান তাকে সিনেট সদস্য পদে মনোনয়ন দেন। এই সময়ে অনুষ্ঠিত সিনেটের বিভিন্ন অধিবেশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এ বিষয়ে তিলোত্তমা শিকদার নয়া দিগন্তকে বলেন, রোল না আসায় আমি থার্ড ইয়ারের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারিনি। রোল না আসার কারণ হলো, আমার সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরে ছিল না। আমি সে সময় কয়েকটি কোর্সে ফেল করেছিলাম। তবে এখন আমিসহ একই সেশনের আরো কয়েকটি বিভাগের মোট ছয়জন পরীক্ষা দেয়ার স্পেশাল অনুমোদন পেয়েছি।
এ ব্যাপারে বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, তার আবেদন ইম্প্রুভ হয়েছে। এখন তার এই পরীক্ষাগুলো কবে নেয়া হবে সেটি বিভাগের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এটা ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিলোত্তমা বলেন, আসলে ব্যাপারটা হলো দীর্ঘ দিন ধরে আমি রাজনীতি করছি। ২০১৩ সালে হলের সেক্রেটারি হওয়ার পর থেকে নিজের জন্যে একটা দিনও ব্যায় করিনি। সামনে সম্মেলন চলে আসছে। তাই এখন আমার ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করার উদ্দেশ্যেই অনেকে এগুলো করছে। আরো তো অনেকেই এমন আছে, তাদের নিয়ে তো কেউ কিছু বলছে না। আমাকে মানসিক চাপে রেখে, চরিত্র হননের উদ্দেশ্য ছাড়া আর এটা কিছু না। একজন শিক্ষার্থী কত বছরের মধ্যে অনার্স শেষ করতে পারে জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ বলেন, সাধারণত চার বছরের অনার্স সর্বোচ্চ ছয় বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে। এটাই নিয়ম। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় স্পেশাল পাওয়ারের মাধ্যমে ফাইন দিয়ে আরো দুই বছর রান করার সুযোগ থাকে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত (ভিসির বিদেশ সফরের কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত) ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল একটি গণমাধ্যমকে বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে ছয় বছরের মধ্যে অনার্স শেষ করতে হয়। তার পরীক্ষার অনুমোদনের বিষয়টা কবে ইম্প্রুভ হয়েছে সেটি আমার মনে পড়ছে না। সর্বশেষ ডিনস কমিটিতে এ রকম কিছু ইম্প্রুভ হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না।